ড্রেজিং বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কের পরিবর্তে নৌপথে কার্গো পরিবহনে প্রতিবছর ব্যয় সাশ্রয় হয় প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও নিরাপদ নদীপথ উন্নয়নে প্রতিবছর ড্রেজিং বাবদ ব্যয় হয় ৬০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট পলিসিতেও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সুদূর প্রাচীনকালে এ দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় ইদানীং জাহাজশিল্প নতুন রূপে আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে নির্মিত পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ এখন ডেনমার্ক, জার্মানি পোল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বাজার সম্প্রসারণের ফলে সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এরফলে এ অঞ্চলের পণ্য সরবরাহ ও সামুদ্রিক পরিসেবা প্রসারিত করার একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জলপথের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও দিন দিন বাড়ছে।
তিনি এক পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলেন, নৌপথে ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট আমদানি-রপ্তানি ছিল ৪৩ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ দশমিক ২১ মিলিয়ন মেট্রিক টন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জলপথের দীর্ঘমেয়াদী নাব্যতা বৃদ্ধি, নদীবন্দরগুলির আধুনিকায়ন, নতুন বন্দর নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোগুলিতে জাহাজ ও যাত্রী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সকল নৌযানের দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, দেশ-বিদেশে কন্টেইনার পরিবহনের উন্নয়ন, ড্রেজিং কার্যক্রম ও ফেরি সার্ভিসের সম্প্রসারণ, বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোক্তাগণ এগিয়ে আসতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। ইতোমধ্যেই বিদ্যমান ভূমি এবং পানিসম্পদের উপর চাপ তৈরি হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে, আমরা নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রস্তুত করেছি এবং ইতোমধ্যে এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,এই পরিকল্পনার অন্যতম উপাদান হচ্ছে পানি সম্পদের সুষ্ঠু ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র সীমা প্রাপ্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলাদেশ ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমার ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সমুদ্রের ৩৫৪ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি সমুদ্র তলদেশের সম্পদ রয়েছে। সমুদ্রগর্ভ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ আহরণ করা যাবে তা বাংলাদেশের মোট ভূখ- হতে আহরিত সম্পদের ৮১ ভাগ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি খাতও এই সম্পদ আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, ২য় দক্ষিণ এশিয়া সামুদ্রিক ও লজিস্টিক ফোরাম ২০১৮ তে যেসব সুপারিশ প্রদান করা হবে তা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, ২য় দক্ষিণ এশিয়া সামুদ্রিক ও লজিস্টিক ফোরাম ২০১৮ তে যেসব সুপারিশ প্রদান করা হবে তা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।’
তাঁর সরকারের আমলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা আনায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানির প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং জাতিসংঘ ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদ দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত প্রায় এক দশক ধরে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে যা গত বছর ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে ২০১৮ সালে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।