ডিএমপি নিউজঃ সুপারশপ স্বপ্নের এক আউটলেট থেকে নিজের বাচ্চার জন্য দুধের কৌটা চুরি করেছিলেন একজন বাবা। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে। পরে আউটলেটের নিরাপত্তাকর্মীর হাতে ধরা পড়েন ওই বাবা। এরপর খিলগাঁওয়ে পুলিশের সামনে হাজির করা হয় অসহায় এ বাবাকে।
এসময় তিনি খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলামের কাছে নিজের অসহায়ত্বের বর্ণনা দেন। বলেন, স্যার, তিনমাস হল চাকরি নেই, বেতন নেই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে চুরি করেছি। এমন কথা শুনে যেন মনের মধ্যে একটা নাড়া দিয়ে উঠল এই পুলিশ কর্মকর্তার। ওই বাবার অসহায়ত্ব বুঝে তাৎক্ষণিকভাবে দুধের দাম দিয়ে দেন তিনি।
খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য ফেসবুকে দেয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল।
‘গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।’
একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’
‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমার খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।’
‘আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেললো। তারপর বললো, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’
‘সঙ্গে সঙ্গে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়লো। মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো একই কাজ করতাম।’
‘সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।’
তিনি শেষে লিখেন, ‘আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে…হয়তো আমি ভালো চাকরি করে আজ ভাল আছি, কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরুপায়!!! এর দায়ভার কার??!!’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে পোস্টটি ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি নজরে আসে অনেকের। ভাইরাল এই পোস্টটি দেখে সুপার শপ স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালকসহ আরো অনেকেই ওই বাবাকে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে সেই বাবাকে সাহায্যের বিষয়ে অনেকে সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।