ডিএমপি নিউজ: গত মাসেই নির্ঘাত বাঘের মুখ থেকে ৬ কিশোরকে সুন্দরবন থেকে উদ্ধার করে ধান সাগর নৌ পুলিশ স্টেশন। দুর্দান্ত সাহস আর অটুট মনোবল নিয়ে হিংস্র পশুর কবল থেকে রক্ষা করেছিল কয়েকটি কিশোর প্রাণ।
আজও বুক ভরা সাহস আর অটুট মনোবল নিয়ে ৩ তরুণকে ঘরে ফিরিয়ে দিল চামটা নৌ পুলিশ স্টেশন। হতে পারতো ডাকাতদের হাতে পরে টাকা পয়সা, মোবাইল ফোন ও হাত ঘড়ি খোয়া যেত। তার চেয়ে নির্মম বাস্তবতাও ঘটে যেতে পারতো তাদের জীবনে। হয়তো মা – বাবা বুকে তারা নাও ফিরে আসতে পারতো।
১৯ জুন। ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা ২০ মিনিট। হঠাৎ আইসি চামটাঘাটের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। বাংলাদেশ পুলিশের জরুরি সেবায় নিয়োজিত হট লাইন ৯৯৯ থেকে একটি কল। দ্রুত রিসিভ করতেই মুঠো ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানায় কিছু যুবক নদীতে বিপদগ্রস্ত। তাদের সাহায্য প্রয়োজন। ডিআইজি নৌ পুলিশের সার্বিক নির্দেশনায় নৌ পুলিশ সদস্যরা অন্যের বিপদে ঝাপিয়ে পরতে প্রস্তুত। সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত বিপদাক্রান্ত তরুণদের ফোন করে আইসি চামটাঘাট।সাথে সাথে নৌ পুলিশ চামটাঘাট সদস্যরা বেড়িয়ে পরে যুবকদের উদ্ধার করতে।
যে নম্বর টি দেয়া হয়েছিল তাতে ফোন করে শুনতে পায় কাঁদো কাঁদো কন্ঠ। ভয় আর বিপদের আশংকায় ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছিল না। কোন ভাবে মোখলেস নামের তরুণ জানালোঃ- তারা নদী মধ্যে আছে এবং তীর কোন দিকে বুঝতে পারছে না। এদিকে নৌকার ইঞ্জিনটাও তাদের সাথে বেইমানি করেছে। ওদিকে ডাকাতির ভয়ে তাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
তরুণ্যকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি ফিরোজা ম্যাডিকেলে পড়া কিছু ছাত্র। করোনার সময়ও নদী এবং নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ডেকেছিল হাত ছানি দিয়ে। তাদের প্রস্তুতি ছিল সিংপুর যাওয়ার। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনই যখন মাঝ নদীতে নৌকা নষ্ট হয়ে যায় এবং পথও হারিয়ে ফেলে এসব যুবক। কোন ভাবেই সঠিক জায়গা বলতে পারছিলনা যুবক। আবার জীজ্ঞেস করা হয়েছিল -তারা কি দেখতে পাচ্ছে যা বেশ দূর থেকে দেখা যায়? উত্তরে জানালো – একটি ব্রিজ।
চামটাঘাট নৌ পুলিশ স্টেশনের টিম আন্দাজ করে নেয় বরহাটি হাওড়- এর ব্রিজ হবে হয়তো। আবার নৌকা ঘোরায়। ব্রীজের কাছাকাছি পৌঁছে কিছু দেখতে পায়না।
চারদিকে অন্ধকার। রাত যত গভীর হচ্ছে ডাকাতের ভয়ও তত বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে ঐ মোবাইল ফোনে কল করে এবার মোবাইল ফোন টি বন্ধ পায়। তাহলে এখন খুঁজে বের করবে কি করে??
সিগন্যাল লাইট দিয়ে ইশারা করে এবার নৌ পুলিশ সদস্যরা। তবুও কোন সাড়া নেই। এবার বাঁশি ফুঁকে এবং হুইসেল দেয়। তবুও কোন উত্তর পায়নি নৌ পুলিশ সদস্যরা। আরও কাছে যায় ব্রীজের এবং হেলার দিয়ে বলতে থাকে; আমরা নৌ পুলিশ, আপনাদের বন্ধু। যদি আমাদের শুনতে পান তাহলে দয়া করে সাড়া দিন।
এবার হালকা চিৎকার শুনতে পায়। এবং কাছে গিয়ে পায় সে সব তরুণ ছেলেদের। যারা ভয়ে, শংকায় ও আনন্দে কেঁদে কেটে একাকার। চামটাঘাট নৌ পুলিশ স্টেশন- মোখলেস (২১), শিপন মিয়া(২১) ও ইয়াসীন(১৯) কে উদ্ধার করে। নিরাপদে ফিরিয়ে দেয় তাদের বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে।