ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র জিসান হাবিব (১৮) হত্যা মামলার ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সুন্দরী সুমন, স্বপন, মোঃ বিপ্লব, তৈয়ব আলী ওরফে উজ্জল ওরফে তবলা ওরফে বাবলা, মোঃ জাহাঙ্গীর ব্যাপারী ওরফে হৃদয়, মোঃ তানভীর রহমান নেহাল, মোঃ জিহাদ, নূরুল ইসলাম রাব্বি ও মোঃ রাকিব।
আজ (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১.৩০ টায় উত্তরা পূর্ব থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোঃ শহিদুল্লাহ পিপিএম।
তিনি বলেন, জিসান নোয়াখালী সোনাইমুড়ী খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। গত ২৮ নভেম্বর, ২০২০ জিসান নোয়াখালী থেকে ধামরাইয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ০৯ ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা বেলায় জিসান এক আত্মীয়কে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে যান। সেখান থেকে রুহুল আমিন নামের এক আত্মীয়ের সঙ্গে ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাস যোগে নবীনগর ফিরছিলেন। তাদের বহনকৃত বাসটি আবদুল্লাহপুর এলাকায় আসলে জানালা দিয়ে এক ছিনতাইকারী জিসানের মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুত বাস থেকে নেমে দৌড়ে ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন তিনি। এ সময় রুহুলও বাস থেকে নেমে সেখানে যান। এরপর তারা দুজন ছিনতাইকারীর কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে গেলে পেছন থেকে অপর দুইজন ছিনতাইকারী এসে জিসান ও রুহুলকে এলোপাতাড়ি চুরিকাঘাত করে। তাদেরকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে আহত জিসান ও রুহুলকে চিকিৎসার জন্য শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জিসানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা রুজু হয়।
উত্তরা বিভাগের ডিসি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের সনাক্ত করে গত ১২ ডিসেম্বর উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে সুন্দরী সুমন ও স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে রিমাণ্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদীর রায়পুরা থানার বাঘাইকান্দী চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত মোঃ বিপ্লব ও তৈয়ব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। অব্যাহত অভিযানে উত্তরা ও টঙ্গী এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত মোঃ জাহাঙ্গীর ব্যাপারী, মোঃ তানভীর রহমান নেহাল, মোঃ জিহাদ, নূরুল ইসলাম রাব্বি ও মোঃ রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরাসহ পলতাক অভিযুক্ত কবির ও নাতি সোহাগ আব্দুল্লাহপুরসহ উওরা এলাকায় ছিনতাই করে। ঘটনার দিন জিসানের মোবাইল ছিনতাই করে পালানোর সময় জিসান ও রুহুল বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারী হৃদয়কে ধরে ফেললে দলের গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যরা হৃদয়কে ছাড়ানোর জন্য আসে। এ সময় ছিনতাইকারীরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে জিসান ও রুহুল আমিনকে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা একত্রে টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ছিনতাই করে থাকে। দলের একটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে পাহারা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্যরা আশপাশে আসছে কিনা। গ্রুপের কোন একজন ধরা পড়লে গ্রুপের অন্য ৩ থেকে ৪ জন সদস্য মুরুব্বী সেজে ঘটনাস্থলে আসে এবং ‘কি হয়েছে, কি হয়ে ভাই’ ইত্যাদি কথা বলে আটক ছিনতাইকারীকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
জড়িত ছিনতাইকারী চক্রটির প্রায় সকল সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। পলাতকদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
গ্রেফতারকৃতদেরকে আজ (১৭ ডিসেম্বর) বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।