ডিএমপি নিউজঃ গুলশান-২ এর আমিন জুয়েলার্সের স্বর্ণ চুরির ঘটনার মূল হোতা জুয়েলার্সের নিরাপত্তা কর্মী সোবহানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটে আমিন জুয়েলার্সে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব পালন করছিল সোবহান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- নিরাপত্তা কর্মী মো. আব্দুস সোবহান মোল্লা (৬১), তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৫৫), মেয়ে সীমা (২৭) ও মেয়ের জামাই হাফেজ মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে বুলবুল (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৯৮ ভরি স্বর্ন ও ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মাওয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
স্বর্ণ চুরির ঘটনায় সোবহানকে সাহায্য করেছিল ঐ মার্কেটের রাজমিস্ত্রি সাদ্দাম। সে এখনও পলাতক রয়েছে। মোট চুরি যাওয়া স্বর্ণের পরিমাণ ছিল ৬৭৯ ভরি ও টাকা ছিল ২২ লাখ। উদ্ধার হয়েছে ৪৯৮ ভরি স্বর্ণ ও ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। বাকি টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ২ টার দিকে গুলশান থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এস এম মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘গত ১৪ তারিখ রাতে গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটে আমিন জুয়েলার্সের শো-রুমের ছাদ কেটে শো-রুমের নিরাপত্তা কর্মী ও রাজমিস্ত্রি সাদ্দাম পরিকল্পিতভাবে ভেতরে ঢুকে স্বর্ণ ও টাকা চুরি করে। চুরি করার পরে তারা ছাদের কাটা অংশে ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে তার উপর একটি ড্রাম রেখে ঢেকে পালিয়ে যায়।’
ঘটনার পরদিন রবিবার মার্কেট বন্ধ থাকায় সোমরাব (১৬ এপ্রিল) দোকান খুলে মালিক এই চুরি ঘটনা টের পায়। তাৎক্ষণিক থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত এসে চুরির ঘটনায় তদন্তে নামে।
ডিসি গুলশান আরো বলেন, ‘ছাদের নতুন ঢালাই দেখে সন্দেহ হলে ওই শোরুমের নিরাপত্তা কর্মী সোবহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য গরমিল করলে তার উপর সন্দেহ তীব্র হয়। এক পর্যায়ে সোবহানের শরীরে বিভিন্ন স্থানে কাটা ছেড়া দেখে এর কারণ জানতে চায় পুলিশ। প্রতি উত্তরে এর কোন সন্তোষজনক উত্তর না দেওয়ায় তাকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির ঘটনা সে স্বীকার করে। পরবর্তী সময়ে সোবহানের দেয়া তথ্য মতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ৪৯৮ ভরি স্বর্ণ ও ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।’
তিনি বলেন, এই ঘটনায় পলাতক আসামী গ্রেফতার, চুরি যাওয়া বাকি স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধারে রাজধানী ও এর আশপাশে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, গুলশান থানা পুলিশের তিনটি টিম এসব স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধারে কাজ করেছে। নিরাপত্তা কর্মী সোবহানের বাড়ি গোপালগঞ্জে। চুরির পর তার স্ত্রী এসব স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ২৫৩ ভরি স্বর্ণসহ গোপালগঞ্জের নিলফা গ্রামের নজরুলের বাড়ি থেকে তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি স্বর্ণ মাওয়া ও মানিকগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়।
গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেট আমিন জুয়েলার্সের শোরুমের মালিক কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শো-রুমের নিরাপত্তা কর্মী সোবাহান দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করছে। তাকে আমরা অনেক বিশ্বাস করতাম। এই সুযোগ নিয়ে সে পরিকল্পিতভাবে এই চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। পহেলা বৈশাখে শো-রুমে বেচাকেনা অনেক হয়েছিল। ওইদিন বিক্রি শেষে রাত ১০টারর পরে দোকান বন্ধ করে চলে যায়। রবিবার সাধারণত দোকান বন্ধ থাকে তাই সোমবার সকালে এসে দোকান খুলে দেখি জুয়েলারি বাক্সের ভেতর থেকে স্বর্ণ ও টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। পরে বিষয়টি থানায় জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করে।’
তিনি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শো-রুমে চুরির ঘটনা ঘটার পরপর পুলিশকে অবহিত করলে গুলশান থানা পুলিশ তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে। খুবই স্বল্প সময়ে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে আসামী গ্রেফতারসহ চুরি যাওয়া স্বর্ণ ও টাকার বড় একটি অংশ উদ্ধার করেছে। পুলিশের উদ্ধার অনেক সন্তোষজনক। পুলিশের তৎপরতা দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি। পুলিশের উপর আমার আস্থা আরো বহুগুন বেড়ে গেছে। পুলিশ এভাবে এগিয়ে কাজ করলে দেশও অনেক এগিয়ে যাবে। ধন্যবাদ পুলিশকে।’
চুরির ঘটনায় ১৭ এপ্রিল গুলশান থানায় একটি মামলা করা হয়। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতারের পর আসামীদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।