কোন এলাকায় বিজলি চমকাবে এবং বজ্রপাত হবে তার আগাম সংকেত দেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঝড়-বৃষ্টির সময় কোন জেলায় বজ্রপাত হতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে আবহাওয়া অফিস। এমনকি ১০ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা আগে বজ্রপাতের সংকেত দেওয়া যাবে। এতে করে ওই এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার সময় পাবে। ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমে আসবে দেশে।
বজ্রপাতের আগাম সংকেত জানতে এরই মধ্যে দেশের আটটি স্থানে বসানো হয়েছে লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর। স্থানগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনার কয়রা এবং পটুয়াখালী। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, আটটি সেন্সরে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে। একেকটি সেন্সরের রেঞ্জ ২৫০ কিলোমিটার। প্রতিটি সেন্সর থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মনিটরিং করা যাবে। এক মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশে কতবার বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয় সেটিও সংরক্ষণ করা হবে। তবে এখন সব চলছে পরীক্ষামূলকভাবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হবে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়েবসাইটে এখনো তাঁরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেন। তবে সেটি রাডার থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়, যাতে বজ্রপাতের চিত্র সুস্পষ্টভাবে আসে না। এ ছাড়া এখন বজ্রপাতের তথ্য দেওয়া হয় জেলাওয়ারি। কিন্তু ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট এলাকার নামও বলা যাবে। কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, আগে বজ্রপাতের প্রতি নজর ছিল কম। গুরুত্ব অনুধাবন করে এখন এর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয়, সংকেত পাওয়ার পরও যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা না ছাড়ে তাহলে কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশে ১৩টি নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাতের সংকেত ও সংখ্যা নিরূপণের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, চারভাবে বজ্রপাত হয়ে থাকে। প্রথমত, মেঘমালা থেকে ভূপৃষ্ঠে। দ্বিতীয়ত, মেঘমালার সঙ্গে মেঘমালা। তৃতীয়ত, একই মেঘের মধ্যে। চতুর্থত, মেঘমালা থেকে বায়ুমণ্ডলে। এর মধ্যে মেঘমালা থেকে ভূপৃষ্ঠে যে বজ্রপাত হয় সেটি সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। তাতে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। অনেক বজ্রপাত হয় ভূপৃষ্ঠের ওপর, যেটা ক্ষতিকর নয়। যেটি ভূপৃষ্ঠে পড়ে সেটি ক্ষতিকর। মানুষের মৃত্যু হয়। নতুন ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে জানা যাবে এক দিনে কতবার বিজলি চমকায় এবং কতবার বজ্রপাত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছর আগেও বজ্রপাতে বছরে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন মানুষ মারা যেত। প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা বাড়ায় সেখানে মৃতের সংখ্যা কমে ২০-এ দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুর, জাপান, কানাডা এমনকি পাশের দেশ ভারতেও ডিটেকটিভ সেন্সর বসিয়ে বজ্রপাতের আগাম সংকেত মিলছে।