মাউন্ট আগুংয়ে অগ্ন্যুত্পাতের ভয়ে বালির প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
পাঁচ দশক পর ফুঁসে ওঠা একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের ভয়ে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের প্রায় দেড় লাখ বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ মাউন্ট আগুং নামের ওই আগ্নেয়গিরি থেকে যে কোনো সময় অগ্ন্যুত্পাত হতে পারে বলে সতর্ক করার পর স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন। আগ্নেয়গিরিটির জ্বালামুখ দিয়ে ধোঁয়া উঠছে । ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি আছে, যা সংখ্যায় প্রায় ১৩০টি।
সর্বশেষ ১৯৬৩ সালে মাউন্ট আগুং এ অগ্ন্যুত্পাতে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহেই আগ্নেয়গিরিটির সতর্কতা মাত্রা ‘সর্বোচ্চ’তে উন্নীত করা হয়। তখন থেকেই মাউন্ট আগুংয়ে সাদা ধোঁয়া বের হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে পুরো এলাকা। অগ্ন্যুত্পাতের আশঙ্কা শুরুর পরপরই হাজার হাজার বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে চলে যায়; আশ্রয় নেয় তাঁবু, স্কুলের জিমনেসিয়াম ও সরকারি ভবনগুলোতে। মাউন্ট আগুংয়ের জ্বালামুখ দিয়ে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, কী মাত্রায় অগ্ন্যুত্পাত হবে সে বিষয়ে ধারণা না থাকায় আগ্নেয়গিরি সংশ্লিষ্ট ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা খালি করে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়; এরপরই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়।
অগ্ন্যুত্পাত এবং তারপরের পুনর্বাসনে সময় লাগতে পারে বিবেচনায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রচুর পরিমাণ খাবার, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য রসদ জড়ো করা হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অনেকেরই আশঙ্কা, ফুঁসে ওঠা মাউন্ট আগুংয়ের লাভা তাদের বাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংস করে দেবে। ‘যদি সত্যিই আমার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কি করে আবার শুরু করবো তা বুঝতে পারছি না; কোথায় আমার বাচ্চারা ঘুমাবে তাও জানি না। এখন যা করতে পারি, তা হচ্ছে প্রার্থনা,’ বলেন ৪০ বছর বয়সী গুস্তি গেগো আস্তানা। কর্মকর্তারা জানান, আগ্নেয়গিরির আশপাশে বিপজ্জনক এলাকায় এখনও ৩০ হাজারের মতো গবাদিপশু আছে। স্থানীয়দের আয় ও জীবনযাপনে গবাদিপশু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিবেচনায় সেগুলো উদ্ধারেরও চেষ্টা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠার পরও অগ্ন্যুত্পাতের আগে এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মতো সময় নেয়। পাঁচ দশক আগে সর্বশেষ হওয়া অগ্ন্যুত্পাতের তুলনায় এবার আগেই আশপাশের এলাকা খালি করে ফেলা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন। ‘চূড়ান্ত বিপজ্জনক অবস্থার আগ পর্যন্ত আমরা বাড়িঘর খালি করিনি। ছাই এবং কাঁকর বেরিয়ে আসার পরও আমাদের জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক; যতক্ষণ পর্যন্ত না বিশাল লাভা বেরিয়ে এসে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল,’ বলেন ৮২ বছরের বৃদ্ধা গুস্তি আয়ু ওয়াতি। অগ্ন্যুত্পাতের আশঙ্কা বালির পর্যটন শিল্পেও প্রভাব ফেলেছে। সতর্কতা জারির কারণে সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার অনেক পর্যটক শেষ মুহূর্তে তাদের মত বদলে দ্বীপটিতে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বালির টুরিজম বিভাগ ভ্রমণকারীদের নিশ্চয়তা দিয়ে একটি চিঠি প্রকাশ করেছে। বিমান চলাচলও স্বাভাবিক আছে। ‘মাউন্ট আগুং এলাকা ছাড়া বালি দ্বীপ এখনো নিরাপদ; পর্যটকদের নিশ্চিন্ত মনে ভ্রমণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে,’ চিঠিতে এমনটাই বলে টুরিজম বিভাগ।
বুধবার ইন্দোনেশিয়ার যাতায়াত মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অগ্ন্যুত্পাত শুরু হলে বালির বিমানগুলোকে অন্য ১০টি বিমানবন্দরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন খাতে বালি দ্বীপের অবদান অপরিসীম। গত বছর দ্বীপটিতে প্রায় ৫০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছিল। ২০১৬ সালে বালির পার্শ্ববর্তী লুম্বক দ্বীপের একটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের পর বাতাসে ছাই ছড়িয়ে পড়ায় কারণে কয়েকশ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান বাতিল করতে হয়েছিল।