ডিএমপি নিউজঃ আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। রাজধানীর অধিকাংশ মানুষই নাড়ির টানে প্রিয় জনের সাথে ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফিরবেন। আর এই বাড়ি ফিরতে অনেকেই পড়েন অযাচিত বিপদে। তার মধ্যে এখন অন্যতম এক আতংকের নাম অজ্ঞান পার্টি। এ পার্টির সদস্যরা সাধারণত ঈদ বা জাতীয় কোন উৎসবকে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে ওঠে। অজ্ঞান পার্টির প্রধান টার্গেট সাধারণ যাত্রীরা। এ পার্টির সদস্যরা এতটাই ধূর্ত যে তাদের দেখে চেনার উপায় নেই। বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে এ চক্রের সদস্যরা ছদ্মবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে ভাব জমিয়ে যে কোনো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেয় নেশা জাতীয় ট্যাবলেট। যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে সর্বস্ব লুটে নিয়ে সুবিধামত স্থানে সটকে পড়ে। অনেক সময় অজ্ঞানকৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত মোবাইল দিয়ে তার নিকট আত্মীয়ের কাছে ফোন করে তাকে আটক রাখার কথা বলে বিকাশ বা অন্য কোন মাধ্যমে আরো নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ চক্রের সঙ্গে মহিলা সদস্যও রয়েছে। অনেক সময় তারা স্বামী-স্ত্রী সেজে যানবাহনে ওঠে। এরপর টার্গেটকৃত এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে ফেলে।
অজ্ঞান পার্টির খপ্পর থেকে বাঁচার পরামর্শসমূহঃ
♦ ভ্রমন পথে অযাচিতভাবে অপরিচিত কেউ অহেতুক ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পাত্তা না দেই। মনে রাখবেন দুষ্ট লোকেরাই মিষ্ট কথা বলে ফাঁন্দে ফেলে। আর এই করোনাকালীন সময়ে অবশ্যই সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতায়াত করুন। এতে করে যেমন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যাবে তেমনি দুস্কৃতিকারীরা আপনার সাথে সখ্য গড়ে তুলতে কাছে ভীড়তে পারবে না।
♦ আপনার পাশের সিটের লোকটিই আপনার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে চাইবে এবং এক সময় নিচের থেকে খাবার (কেক, চিপস, কোমল পানীয়, কাটা পেয়ারা বা আনারস ইত্যাদি) কিনে সেও খাবে আপনাকেও খেতে বলবে। ভুলেও সেই খাবার না খাই। এতে আপনার জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি আছে।
♦ ফুটপাতে বা রাস্তার মোড়ে টং দোকান থেকে খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকি। আর এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে বাহিরের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
♦ ফেরিওয়ালা বা ভ্রাম্যমান কারো কাছ থেকে আচার, আমড়া, শসা, পেয়ারা প্রভৃতি না খাই। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
♦ বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে ভ্রমণের সময় লজেন্স বা চকলেট, আইসক্রিম, সিগারেট জাতীয় কোন খাবার গ্রহণ না করি।
♦ আজকাল ডাবের ভিতরে আগে থেকেই সিরিঞ্জের মাধ্যমে চেতনানাশক ঔষধ মেশানো থাকতে পারে। তাই কখন কোথা হতে তৃষ্ণা নিবারণ করছি সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
♦ প্রয়োজনে যাত্রাপথে হালকা নাস্তার জন্য বাড়ি থেকে সংগৃহীত খাবার বা পানীয় সঙ্গে রাখুন অথবা স্থায়ী দোকান থেকে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে পারেন।
♦ সিএনজিতে চলার সময় যাত্রীরা ড্রাইভারের কাছ থেকে এবং ড্রাইভাররা যাত্রীদের কাছথেকে কোন খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে উভয়ের ঝুঁকি রয়েছে।
♦ যাত্রাপথে নগদ অর্থ বা যে কোন মূল্যবান দ্রব্য নিরাপদ হেফাজতে রাখুন।
♦ ভ্রমণের সময় একাকি ভ্রমন না করে পারলে পরিচিত কাউকে সাথে রাখার চেষ্টা করুন।
♦ যাত্রাপথে পাশের কোন যাত্রী অসুস্থ হলে তাৎক্ষনিকভাবে যানবাহন পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় নিকটস্থ হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থায় সহযোগিতা করুন। আপনার একটু সহযোগিতাই পারে বড় একটা দূর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে।
♦ যাত্রাপথে কোন ব্যক্তির আচার ব্যবহার সন্দেহজনক হলে নিকটস্থ পুলিশকে অথবা গাড়ির চালক, হেলপার বা কন্ট্রাক্টরকে অবহিত করুন। যেকোন বিপদে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন।
♦ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে যাত্রাপথে অবশ্যই ভালো মানের মাস্ক ব্যবস্থার করুন। সেই সাথে ঘন ঘন স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত রাখুন। হাত জীবাণুমুক্তকরণ ছাড়া চোখ ও মুখে হাত দিবেন না। এতে করে আপনার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
শুধু একটু সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে আপনার জীবন ও সম্পদ। সেই সাথে আপনার সচেতনতায় রুখতে পারে মহামারি করোনা ভাইরাসের অবাদ বিচরণ।