ডিএমপি নিউজঃ ইসলাম ধর্মের নামে বিদ্যমান উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করে মূল থেকে সমস্যা নিরসনে একদল বরেণ্য আলেম ও গবেষকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এর ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণালব্ধ অনবদ্য গ্রন্থ “ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ” শীর্ষক গ্রন্থের। আজ এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
এটিইউ’র মিডিয়া এন্ড এ্যাওয়ারনেস উইং কর্তৃক প্রকাশিত ২৩৬ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটিতে ইসলামের পরিচিতি থেকে শুরু করে জিহাদসহ বহুল আলোচিত ও চর্চিত ৪৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
আজ রবিবার (২৪ জুলাই ২০২২) রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে এ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান, এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি মোঃ কামরুল আহসান, বিপিএম (বার)।
গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএস নামক সংগঠনের নামে জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত রুপ লাভ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ এবং বাংলাদেশের জনগণের সর্বাত্বক সহযোগিতায় আমরা জঙ্গিবাদকে দমন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। এটিইউ কর্তৃক প্রকাশিত বইটি জঙ্গিবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, ইসলামে উগ্রবাদের কোন স্থান নেই। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে আমরা সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে এক সাথে বসবাস করি। বাংলাদেশে উগ্রবাদ জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। বইটি বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হলে বিভিন্ন দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন বলেন, ইসলামকে বর্তমানে একটি উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে পরিচিত করতে বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্ত করছে। সেখানে মুসলমানদেরই কাজে লাগানো হচ্ছে। এসব চক্রান্ত প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ধর্মের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণকে জানাতে হবে।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল না হলে আমাদেরও মুক্তি নাই। সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের হুমকি এখনো আছে এবং তা মোকাবেলায় “ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ”এর মতো বই প্রকাশ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ পুলিশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বইটি ইংরেজি ও আরবিতে অনুবাদ করে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এটিইউর প্রধান বলেন, ‘২০১৭ সালে দেশব্যাপী জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট গঠিত হয়। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আমরা ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করি, অভিযান পরিচালনা করি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা তদন্ত করি। সেই সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়ন ও সাইবার ক্রাইমসহ জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে গিয়ে যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলো করে থাকি। এটিউকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
এ গ্রন্থটির সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি হলেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্রান্ড ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ। তাঁর নেতৃত্বে দেশ বরেণ্য ১৪ জন আলেম-গবেষক-অধ্যাপক ও খতিব গ্রন্থটির সম্পাদনা করেন।
গ্রন্থটি রচনা, গ্রন্থনা ও সংকলন করেছেন মুফতি সদরুদ্দীন মাকনুন এবং মাওলানা মিরাজ রহমান।
গ্রন্থটির শেষে পরিশিষ্টতে ১ লক্ষ আলেমের স্বাক্ষর সম্বলিত শান্তির ফতোয়াটিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি উগ্রবাদমুক্ত নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি ঘোষণা করেছেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট তার প্রতিষ্ঠার সূচনা থেকে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের নামে বিদ্যমান উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করে মূল থেকে সমস্যা নিরসনে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে এটিইউ। এ গ্রন্থ পাঠে চিন্তাশীল পাঠক, গবেষক এবং সকল ধর্মের শান্তিপ্রিয় মানুষের উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ তথা জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে এবং এতদসংক্রান্ত অনেক বিভ্রান্তির নিরসন ঘটবে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত।
ঢাকার বাংলাবাজারের মওলা ব্রাদার্সে গ্রন্থটি পাওয়া যাবে।
গ্রন্থটির সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ, বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উক্ত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।