দেশের কৃষি গবেষণা ক্ষেত্রে আরেকটি সাফল্য এসেছে। উদ্ভাবিত হয়েছে আমন মৌসুমে চাষযোগ্য উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ‘ব্রি ধান৮৭’। নব উদ্ভাবিত এই ধানের ফলন হবে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ছয় টন।
আমন মৌসুমে প্রচলিত সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি জাত ‘ব্রি ধান৪৯’ ও ‘বিআর১১’-এর চেয়ে এই জাতের ধানের ফলন যথাক্রমে হেক্টরে এক টন ও আধাটন বেশি। এই সাফল্য এসেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষণায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় ধানের এই নতুন জাত অবমুক্তির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গবেষকরা জানান, নব উদ্ভাবিত ‘ব্রি ধান৮৭’ রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদের উপযোগী। এর চাষাবাদ অন্যান্য উফশী রোপা আমন ধানের মতোই। জীবনকাল ১২৫ থেকে ১৩০ দিন, যা ব্রি ধান৪৯-এর চেয়ে সাত দিন আগাম। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২২ সেন্টিমিটার। কাণ্ড অধিকতর শক্ত হওয়ায় গাছ লম্বা হলেও নুয়ে পড়ে না। পাতা হালকা সবুজ এবং ডিগ পাতা খাড়া, ‘ব্রি ধান৪৯’-এর চেয়ে লম্বা ও প্রশস্ত। ধানের ছড়া অধিকতর লম্বা ও ধান পাকার সময় ছড়া ডিগ পাতার ওপরে থাকে। ধান পাকার সময়কালেও কাণ্ড ও পাতা সবুজ থাকে। এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন ২৪ দশমিক ১ গ্রাম এবং প্রতিটি দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭ শতাংশ। চালের আকৃতি লম্বা ও চিকন। সে সুবাদে এই ধানের চালের চাহিদা দেশ-বিদেশে অন্যান্য ধানের চেয়ে বেশি হবে আশা করা যায়। এতে কৃষকরাও অধিক লাভবান হবে।
‘ব্রি ধান২৯’-এর সঙ্গে বন্য ধান Oryza rufipogon এর সংকরায়ণের মাধ্যমে ‘ব্রি ধান৮৭’ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। পরবর্তী সময়ে দুইবার Backcross KGi Pedigree Method-এ হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচন করে এই সারিটি উদ্ভাবন করা হয়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারি নির্বাচনের পর তিন বছর ফলন পরীক্ষা করা হয়। এরপর কৌলিক সারিটি ২০১৬ সালের আমন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কৃষকের মাঠে ফলন পরীক্ষায় ওই কৌলিক সারিটির জীবনকাল ‘ব্রি ধান৪৯’-এর চেয়ে সাত দিন আগাম এবং ফলন বেশি হওয়ায় আমন মৌসুমের একটি জাত হিসেবে এটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়।
উদ্ভাবিত ধানের জাতটি সম্পর্কে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, “উদ্ভাবিত নতুন জাতটি আমন মৌসুমের একটি ভালো জাত হয়ে উঠবে। দেশে প্রায় ৪০ বছর ধরে আমন মৌসুমের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত ‘বিআর১১’-র চেয়েও এর ফলন বেশি হবে। এ ছাড়া ‘বিআর১১’-র চেয়ে ১৮ দিন কম সময়ে নতুন জাতটির ফলন পাওয়া যাবে। আমরা মনে করছি, ‘বিআর১১’-র জায়গা দখল করবে ‘ব্রি ধান৮৭’। ভবিষ্যতে এটাই হয়ে উঠতে পারে আমনের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত।”