জাপানের সম্রাট আকিহিতো যেন সিংহাসন ছাড়তে পারেন, সে জন্য সে দেশের মন্ত্রিপরিষদ একটি বিল অনুমোদন করেছে। সম্রাট আকিহিতো গত বছরই জানিয়েছিলেন, বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি তার রাজকীয় দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তিনি অবসরে যেতে চান। কিন্তু জাপানের বর্তমান আইনে সম্রাট মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সিংহাসন ছাড়তে পারেন না। সে জন্যই সরকার আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
১৮১৭ সালের পর জাপানে কোনো সম্রাটের এভাবে অবসরে যাওয়ার কোনো নজির নেই। ১৯৮৯ সালে সম্রাট হিরোহিতোর মৃত্যুর পর আকিহিতো সিংহাসনে বসেন। জাপানে সম্রাটের পদটি আলংকারিক, তার কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। তিনি রাজনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্যও করতে পারেন না।
সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ত্যাগ করলে তার জায়গায় নতুন সম্রাট হবেন যুবরাজ নারুহিতো। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ছাড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। জাপানে রাজপরিবারের কলেবর যেভাবে দিনে দিনে কমছে, তাতে কতদিন সেখানে এই পরিবারকে টিকিয়ে রাখা যাবে সে প্রশ্ন উঠেছে।
নিয়ম অনুযায়ী কেবলমাত্র রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যরাই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। রাজপরিবারের মেয়েরা যখন কোনো সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করেন, তখন তারাও সাধারণ নাগরিকে পরিণত হন, রাজপরিবারের অংশ থাকেন না।
সম্রাট আকিহিতোর দুই ছেলে যুবরাজ নারুহিতো ও যুবরাজ ফুমিহিতো। যুবরাজ নারুহিতো, যিনি পরবর্তী সম্রাট হতে যাচ্ছেন, তার দুই কন্যা সন্তান। কাজেই তাদের কারও রাজসিংহাসনে বসার সুযোগ নেই।
নারুহিতোর পর রাজ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হবেন ফুমিহিতোর ১০ বছর বয়সী ছেলে হিসাহিতো। তিনিই রাজপরিবারের বংশলতিকা টিকিয়ে রাখার জন্য একমাত্র ভরসা।
মাত্র এ সপ্তাহেই সম্রাট আকিহিতোর নাতনি রাজকুমারী মাকো তার বাগদানের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বিয়ে করছেন একটি ল ফার্মে কর্মরত এক সাধারণ নাগরিককে। এর মানে হচ্ছে ২৫ বছর বয়সী রাজকুমারীকে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে সাধারণ নাগরিকের জীবন বেছে নিতে হবে। তার ছেলেমেয়েরাও আর রাজপরিবারের কেউ বলে বিবেচিত হবে না।
রাজপরিবারের কলেবর যেহেতু কমছে, তাই রাজকুমারীদেরও রাজপরিবারের ভেতরে বিয়ের সম্ভাবনা কমছে। তারা অনেকেই সাধারণ নাগরিকদেরই বেছে নিচ্ছেন জীবনসঙ্গী হিসেবে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে কতদিন আর জাপানের রাজপরিবার টিকিয়ে রাখা যাবে।