ডিএমপি নিউজঃ উত্তরা এলাকায় সিটি কর্পোরেশন ও ডিএমপি টিম যৌথভাবে ভিজিট করে ফুটপাত দখল মুক্ত করবে। ঢাকা শহরের ফুটপাত কেউ দখল করে রাখতে পারবে না। আমরা সেক্টর ভিত্তিক বসে মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যাগুলো সমাধান করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও উত্তরাকে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব। রিক্সার ক্ষেত্রে সেক্টর ভিত্তিক আলাদা কালার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
আজ (১৯ জুন, ২০১৯) সকাল ১১ টায় উত্তরায় বাংলাদেশ ক্লাবে আয়োজিত উত্তরা এলাকায় চলমান চক্রাকার বাস সার্ভিসের সেবার মান উন্নয়নকল্পে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
উত্তরা এলাকার যানজট নিরসনের মেয়র মহোদয়ের চমৎকার যুগপোযোগী কার্যকর একটি উদ্যোগ গ্রহনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে কমিশনার বলেন, আমরা যারা সার্ভিস প্রোভাইডার, আমরা যদি আমাদের মত করে কাজ করি সেক্ষেত্রে জনগণের মনের প্রতিফলন ঘটে না। আজকে এখানে এসে সেক্টর ফোরামের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। উওরাবাসী, সাংবাদিক ও সবপেশাজীবিদের কথা শুনে আমরা কিন্তু আসল চিত্রটা কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে । ডিএমপিতে শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও যানজটকে সহনশীলতা করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহন করবো। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আজকে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নিরাপদে রয়েছে। দুই একটা অপরাধ ঘটলেও অতি স্বল্প সময়ে আমরা সনাক্ত করে গ্রেফতার করি। আপনাদের নিরাপদ রাখার জন্য সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে আমরা অহর্নিশ দায়িত্ব পালন করছি। ঢাকা মহানগরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা উওরা। উত্তরা ঢাকা মহানগরে প্রবেশ পথ ও এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। উওরাকে মডেল সিটিতে পরিণত করতে হলে সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে মতিঝিল ফুটপাত দখলমুক্ত করেছি। আড়াই বছর ধরে ঢাকা কলেজ থেকে সাইন্সল্যাব, আজিমপুর পর্যন্ত হকার মুক্ত রয়েছে। আমরা হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট করে দিয়েছি। যা বর্তমান চলমান রয়েছে। আমাদের জনদায়বদ্ধতা রয়েছে, ইচ্ছা করলে বলপ্রয়োগ করে সব সমাধান করা যাবে না। আইন মানবো, শৃঙ্খলা আনবো, পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষ যাতে কষ্টে না পরে সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে যানজট নিরসন কিভাবে করা যায় তার নির্দেশনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন।
কমিশনার বলেন, আমরা সেক্টর ভিত্তিক বসে মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যাগুলো সমাধান করব। শৃঙ্খলা এখানে ফিরিয়ে আনতে ও উত্তরাকে মডেল সিটি করতে হবে। রিক্সার ক্ষেত্রে সেক্টর ভিত্তিক আলাদা কালার দেয়া হবে। রিক্সা যাতে মেইন রোডে না উঠতে পারে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছি। ইজিবাইক একটা ঘাতক বাহন। এটা শহরের মধ্যে কোনভাবে চলতে পারবে না। একাজে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। যানজট নিরসনের জন্য লেগুনার স্ট্যান্ডগুলো দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। পার্কিং এর জায়গায় অনুমোদনহীনভাবে কারা দোকান বা অন্য কিছু বানিয়েছে তার তালিকা তৈরি করুন সিটি কর্পোরেশন ও আমরা মিলে উচ্ছেদ করব।
তিনি আরো বলেন, উত্তরা এলাকায় সিটি কর্পোরেশন ও ডিএমপি টিম ভিজিট করে ফুটপাত দখল মুক্ত করবে। ঢাকা শহরের ফুটপাত কেউ দখল করে রাখতে পারবে না। রাতারাতি এটা করা সম্ভব না। আপনাদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা থাকলে সবকিছু সম্ভব। মেয়র মহোদয়ের কাছে অনুরোধ করবো সরকারিভাবে রাস্তায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করুন। তা হলে নো পার্কিংটা বন্ধ করা আমাদের জন্য সহজ হবে। প্রয়োজনে বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। আজকাল কারিগরি ও প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া অপরাধকে দমন করা সম্ভব না। গুলশান ও বনানী এলাকায় সিসিটিভি’র আওতায় এলওসিসি এনেছেন। আপনারাও উত্তরাবাসীর উদ্যোগ নিয়ে সিসিটিভি স্থাপন করতে পারেন।
মেয়র মহোদয়ের উদ্যোগের সাথে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমাদের যৌথ টিম কাল থেকে উত্তরা এলাকায় কাজ শুরু করবে। এক মাসের মধ্যে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মতবিনিময় সভায় আগত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের করা প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখিত কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ সম্পর্কে কমিশনার বলেন, আমরা নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ করছি। বিশ্বের সমস্ত দেশে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণ রয়েছে। আমরা ২০১৬ সালে সিআইএমএস এর মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছি। এখন অপরাধের ডিটেকশন ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। একজন নাগরিকের তথ্য যাতে বাদ না পরে সেজন্য আমররা নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ শুরু করেছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাহারা খাতুন বলেন, উত্তরাকে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে উত্তরার প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মেয়র সাহেবের উদ্যোগকে সফল করতে সহযোগিতা করতে হবে। উত্তরা এলাকায় আমার আসনে ৪টি ইউনিয়ন সিটি কর্পোরেশনভুক্ত হওয়ায় এইসব এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত হতে সময় লাগছে। আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সকলে সহযোগিতা সমাধান করে একটি মডেল সিটি তৈরি হবে। পুলিশকে সহযোগিতা ছাড়া কোন কাজ সম্ভব না। উত্তরা এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য রিক্সা উঠিয়ে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করলে ভালো হবে।
সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, উত্তরা এলাকার রাস্তা অনেক সুন্দর হয়েছে। এতো সুন্দর করে রাস্তা, ফুটপাত সাজানো হয়েছে। কিন্তু আমরা এই সুন্দর দেখতে পারছি না। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। এই মিটিংটি উত্তরার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও দিক নির্দেশনার। আমরা চাই একটি পরিস্কার ও গতিময় ঢাকা। আমি বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বলেছি আমরা চাই সুন্দর একটি উত্তরা গড়তে ও সুন্দর নাগরিক সুবিধা দিতে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চক্রাকার বাস দিয়েছি। পত্রিকায় এসেছে চক্রাকার বাস ঠিকমত চলছে না। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। উত্তরায় ৭টি চওড়া এভিনিউ রয়েছে। তারপরও আমরা চক্রাকার বাস চালাতে পারছিনা। বিআরটিএ বাস লিটারে ৩ কিমি চলে। কিন্তু চওড়া রাস্তা থাকার পরও ১.২১ কিমি চলছে। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে প্রতিবন্ধকতার ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এখান থেকে সিদ্ধান্ত নিব বিআরটিএ বাস যত দ্রুত চলতে পারবে ততটা গতিময় ঢাকা হবে। আগামী ১ মাসের মধ্যে আমরা একটি ভালো সিটি বানানোর চ্যালেঞ্জ নিবো।
মেয়র বলেন, সবাই মিলে সবার ঢাকা। পর্যায়ক্রমে উত্তরার ৭টি এভিনিউয়ের মধ্যে হিউম্যান হলার, লেগুনা ও রিক্সা উঠিয়ে দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে সেক্টরের ভেতরে ছোট মিনি এসিবাস দেয়া হবে। রিক্সার জন্য সেক্টর ওয়াইজ আলাদা কালারের ড্রেস দিতে হবে। জীব হত্যা মহাপাপ বলে আমরা কুকুর হত্যা না করে ভ্যাকসিনের আওতায় এনেছি। এজন্য কুকুরের গায়ে রং মাখিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বে স্কুল বাস রয়েছে। রয়েছে কারপুলও। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামায় যানজট তৈরি হচ্ছে। নতুন ১৮ ওয়ার্ডের জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু থেকে সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় উত্তরাকে মডেল সিটিতে পরিনত করতে পারব। সেক্টরে খন্ড খন্ড সিসিটিভি না লাগিয়ে সমন্বয় করে সেন্ট্রালি সার্ভিলেন্সের আওতায় আনতে সেক্টর ফোরামের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করছি। আগামী ১ মাসের মধ্যে নাগরিক সেবা দিতে ও নগরবাসীর সমস্যা শুনতে চালু হবে ৩৩৩ নম্বর।
এসময় ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা, উত্তরা সেক্টর ফোরামের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মীসহ বিভিন্নস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।