উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যে শর্ত দরকার, তা পূরণ করায় আবেদন করার যোগ্য হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। আর ঐতিহাসিক এই উত্তরণে উৎসবে ভাসবে বাংলাদেশ।জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বাংলাদশের প্রোফাইলে এখন বলা আছে, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা এই মার্চেই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের পথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। আগামী ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক (ইভিআই) এই তিন শর্ত পূরণ করতে হয়, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পূরণ হয়েছে।
মাথাপিছু জাতীয় আয় এক হাজার ২৫ ডলারের নিচে থাকলে সে দেশ এলডিসিভুক্ত হয়, এই আয় ১২৩০ ডলার অতিক্রম করলে ধাপ উন্নয়নের যোগ্যতা অর্জন হয়। বাংলাদেশের এখন ১৬১০ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭২। এক্ষেত্রে ৬২ পর্যন্ত দেশগুলো এলডিসিভুক্ত, ৬৪ ছাড়ালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়। অর্থনৈতিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২। এই পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে এলডিসিভুক্ত হয়, ৩২ এ আনার পর উন্নয়নশীল দেশে যোগ্যতা অর্জন হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আশাবাদী, এভাবে চললে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে কোনো সমস্যা হবে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন হলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি অবহিত করা হয়। একই সঙ্গে এ অর্জনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরবর্তীতে ২০ মার্চ থেকে সপ্তাহব্যাপী উৎসব উদযাপন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে দেশ গঠনে অসামান্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে আগামী ২২ মার্চ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে এদিন সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে উত্তরণ আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে জাতিসংঘের স্বীকৃতিপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। এতে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে স্মারক ডাক টিকিটও উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে বিদেশিদেরও। ওইদিন বেলা ৩টায় ঢাকার চার স্থান থেকে একযোগে বের করা হবে শোভাযাত্রা। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভিডিও কনফারেন্সে এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আতশবাজি ও লেজার শো-ও থাকবে এতে।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগ, উন্নয়ন সহযোগী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সিভিল সোসাইটি, দেশি-বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সাফল্য অর্জনের কর্মসূচি হিসেবে ২০ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী সরকারের সব বিভাগের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি পালন করা হবে। এ সময়ে দেশের সব এনজিও, বেসরকারি সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানায় মালিক-শ্রমিক সাফল্য উদযাপন উৎসব করবে। এতে থাকবে শ্রমিকদের মধ্যে ভালো খাবার পরিবেশন করার পাশাপাশি পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নকরণ। এর বাইরে সারাদেশে রোডশো হবে।
২৩ মার্চ সকাল ১০টায় হোটেল রেডিসন ব্লুতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও রেডিসন ব্লু হোটেলে পালিত হবে মূল কর্মসূচি। এদিন সন্ধ্যায় হাতিরঝিলে হবে লেজার শো।
উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্য ঢাকা শহরকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হবে। এ স্তরে উত্তরণে বাংলাদেশের কর্মপ্রচেষ্টা নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হবে। প্রকাশ করা হবে স্মরণিকা। দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, উন্নয়নকর্মী ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে একই স্থানে বিশেষজ্ঞ আলোচকদের নিয়ে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হবে।
পরদিন থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে থাকছে সেমিনার, চিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন। ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানাভাবে সাজসজ্জা এবং গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে চালানো হবে এ উৎসবের প্রচার। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণমাধ্যমেও থাকবে নানা আয়োজন।
এসব অনুষ্ঠান চলবে ২৬ মার্চ অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের এ বার্তা সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, অধিদফতর, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব আয়োজন করা হলে তা হবে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম উদযাপন।
এছাড়া ঢাকা শহরকে চারটি জোনে ভাগ করে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্ব স্ব উদ্যোগে এ র্যালি বের করবে এবং রাজধানী প্রদক্ষিণ করবে। সন্ধ্যাকালীন কর্মসূচিতে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সমবেতরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। অনুষ্ঠানে ৫-৭ মিনিটের একটি লেজার শো এবং ১০-১২ মিনিটের একটি ফায়ার ওয়ার্কস পরিবেশিত হবে। পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে ২ ঘণ্টাব্যাপী।