ডিএমপি নিউজ: জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম- আনোয়ারুল ইসলাম সাগর ওরফে ফোরকান ওরফে সাগর মৃধা।
গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ডিএমপি নিউজকে বলেন, ভুক্তভুগী মোঃ গোলাম রাব্বী সরকার বসুন্ধরা বারিধারাস্থ এভারকেয়ার হাসপাতাল লিঃ এর অর্থোপেডিক বিভাগে চীফ ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। গ্রেফতারকৃত ওই হাসপাতালে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে। হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এসে ভুক্তভুগীর সাথে গ্রেফতারকৃতের ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গ্রেফতারকৃত তাদের সচিবদের একটি এসোসিয়েশন আছে। যারা আমদানীকৃত গাড়ি পোর্ট হতে বিভিন্ন পন্থায় স্বল্প ব্যয়ে বের করে বিক্রয় করে থাকে বলে জানায়। এটি একটি লাভজনক ব্যবসা দেখিয়ে টাকা বিনিয়োগ করার জন্য ভুক্তভুগীকে প্রলোভন দেখায়। সে প্রলোভিত হয়ে গত ১০ জুন ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩০টায় উক্ত এসোসিয়েশনের মেম্বারশীপ পাওয়ার জন্য গ্রেফতারকৃতকে ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও এভারকেয়ার হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের জয়েন্ট কেয়ার এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার এর সকল ডাক্তার এবং অফিস স্টাফদের গ্রেফতারকৃত নিজেকে উপ-সচিব হিসাবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় সুযোগ সুবিধা নিত।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত ২০২২ সালে পদোন্নতি পেয়ে উপ-সচিব হতে যুগ্ম সচিব হয় বলে ভুক্তভুগীকে জানায়। গ্রেফতারকৃত সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরি দিতে পারবে মর্মে তাকে প্রলোভন দেখায়। সে প্রলোভিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এর ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টর (সোপ) এর নিয়োগ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অফিস করণিক পদে বেসামরিক কর্মচারী নিয়োগ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ১৩ লক্ষ টাকা গ্রেফতারকৃতকে প্রদান করেন। তিনি সরল বিশ্বাসে উক্ত টাকা প্রদান করার পর গ্রেফতারকৃতের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে গ্রেফতারকৃত তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তখন তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এসংক্রান্তে ভুক্তভুগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে রমনা থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলাটি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
তিনি আরো বলেন, মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। অতঃপর বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২) রমনা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১ টি মোবাইল ফোন ও ১টি ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ড উদ্ধারমূলে জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতকে রমনা থানায় রুজুকৃত মামলায় রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান গোয়েন্দা এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এরকম প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা-সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলো হলো-
-অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কোন লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়া।
-কোথাও লেনদেনের পূর্বে তার সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই পূর্বক লেনদেন করা।
-কারো সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে তার সাথে সু-সম্পর্কে জড়ানো অনুচিত।
-অবৈধ পন্থায় চাকুরী পাওয়ার চেষ্টা না করা।
অভিযানটি গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, পিপিএম এর নির্দেশনায় অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান, বিপিএম-সেবা এর তত্ত্বাবধানে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।