হিলি হাড়িপুকুর গ্রামের ঐ পাড়ার অর্ধেক বাংলাদেশের বাঘমারা। অন্যটা ভারতের হাঁড়িপুকুর। কিন্তু দুই পাড়ার মাটি, মানুষ, ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি এক। আজও একটি পাড়ার দুটি দেশ। স্থানীয়দের কারও ড্রইংরুম বাংলাদেশে, বেডরুম ভারতে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর থেকে মাত্র অর্ধ কিলোমিটার উত্তরেই এই সীমান্ত গ্রাম। গ্রামের মাঝপথে রয়েছে চিহ্নিত কয়েকটি সীমানা পিলার।
আবার কোথাও সাদা রং দিয়ে দুই দেশের সীমানা ভাগ করে দেখানো হয়েছে। হাঁড়িপুকুর গ্রামটি ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশি মহিলারা দিন শেষে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ভারতে যান। ভারতীয় যুবকরা পান চিবোতে চিবোতে বাংলাদেশে এসে আড্ডা দেন। ঈদ এলে দুই গ্রামের বাসিন্দারা একত্রে উৎসব পালন করেন। পক্ষান্তরে হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব এলেও উভয় গ্রামের বাসিন্দারা উৎসব পালন করেন।
গ্রামের একমাত্র মসজিদটি পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। এ মসজিদে যেতে হয় ভারতের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। পূর্ব-দক্ষিণ ভারতের। মসজিদের দরজাটি পূর্বমুখী এবং সেটি ভারতীয় অংশে। ভারতের মাটি মাড়িয়ে বাংলাদেশিরা নামাজ আদায় করতে যান মসজিদে।
গোটা গ্রামে বসবাস করে ১৯৮টি পরিবার। এর মধ্যে ৪টি পরিবার সনাতন ধর্মাবলম্বী। বাকিরা ইসলাম ধর্মের। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এই গ্রামের এক তৃতীয়াংশ পড়ে বাংলাদেশে, বাকিটা (হাঁড়িপুকুর) ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশের হাঁড়িপুুকুর গ্রাম দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের অন্তর্গত। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার অন্তর্গত বাগমারা গ্রাম। এভাবে গ্রামটিকে ভাগ করে দেওয়া হলেও গ্রামবাসীকে ভাগ করা যায়নি। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার নওপাড়া, রায়ভাগ, নন্দীপুর আর মংলা ঘাসুদিয়া দিয়ে অবাধে যাতায়াত করা যায় হাঁড়িপুকুরে। দুই দেশের এক গ্রাম বলা হয় এই গ্রামটিকে।