ডিএমপি নিউজঃ এসএসসি প্রশ্ন ফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এর ঘটনায় প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- কারিমুল্লাহ, আল-রাফি ওরফে টুটুল ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু। এসময় তাদের হেফাজত হতে ৫টি মোবাইল, ৬ টি সিম কার্ড ও নগদ ১২০০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গুলশান বিভাগের একাধিক টিম শনিবার (১৩ নভেম্বর, ২০২১) ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের পুবাইল এবং নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
আজ রবিবার (১৪ নভেম্বর, ২০২১) বিকাল ৩:০০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম(বার)।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হলে প্রশ্ন ফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা মূলত বিভিন্নভাবে ভুয়া মেসেঞ্জার, ফেইসবুক একাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে ১০০% নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সকল বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস করার বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদেরকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয়। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরকে এই মর্মে সার্কুলেশন করতো যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্ন জনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফে এবং জি-মেইলে সেন্ড করে দিবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ, রকেট এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেইজ এবং গ্রুপের ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৪৭০০ জন।
গ্রেফতারকৃত কারিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, আল রাফি ওরফে টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাদের পরিচালিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মেসেঞ্জার, ফেসবুক পাবলিক গ্রুপ গুলো হলো-কোশ্চেন ব্যাংক, এস এস সি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোশ্চেন লিংক, PSC, JSC, SSC, HSC – All Exam Helping Zone, SSC 2021 All Board ইত্যাদি। গ্রেফতারকৃত আল রাফি টুটুল পাবজি খেলায় পারদর্শী এবং সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। সে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য “আলমগীর হোসেন” নামে একটি ফেইক আইডি খুলে।
ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারও পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা সম্ভব নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবে কান দিবেন না। তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যেসব চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যেসকল ছাত্র পড়াশোনা না করে অনলাইনে প্রশ্নপত্র খুঁজবে সেকল ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে মর্মে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান।