ডিএমপি নিউজঃ ক্রিকেটে একজন বোলার কত ম্যাচ ওয়াইড এবং নো বল না দিয়ে থাকতে পারেন! ১০, ১৫ কিংবা ২০ ম্যাচ? হতে পারে ৫০ ম্যাচও। তাই বলে ১০০ এর বেশি ম্যাচ খেলেও কোনো ওয়াইড কিংবা নো বল নেই! অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার। কিন্তু এটাই সত্যি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সোনালী যুগের সারথি মাইকেল হোল্ডিং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। খেলেছেন ৬০ টেস্ট ও ১০২ ওয়ানডে। শতাধিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলে করেছেন ৫৪৭৩ বল। রান দিয়েছেন ৩০৩৪। কিন্তু অবাক করা কথা হলো ১০২ ওয়ানডেতে তিনি কখনো ওয়াইড কিংবা নো বল দেননি! একটিও না।
১০০-এর বেশি ওয়ানডে খেলে ওয়াইড ও নো না দেয়া একমাত্র খেলোয়াড় তিনি। মাইকেল হোল্ডিংয়ের সতীর্থ জোয়েল গার্নার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এ পেসার খেলেছেন ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত। ১০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছে ৫৮ টেস্ট ও ৯৮ ওয়ানডে। বিস্ময় সৃষ্টিতে তিনিও কম যান নি। ৯৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৩৩০ ডেলিভারিতে তিনিও কখনো ওয়াইড কিংবা নো বল দেননি। এই তালিকায় আছেন নিউজিল্যান্ডের এক খেলোয়াড়। ক্রিস কেয়ার্নসের বাবা ল্যান্স কেয়ার্নস। কিউইদের হয়ে তিনি খেলেছেন ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত। ক্যারিয়ারের ৭৮ ওয়ানডেতে ৪০২১ ডেলিভারিতে তারও নেই কোনো ওয়াইড কিংবা নো।
এত বেশি ম্যাচে টানা বোলিং করেও একটি ওয়াইড কিংবা নো বল না দেয়াটা বিস্ময়কর। ওই সময়ের পর বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটে ওয়াইড ও নো বলের ক্ষেত্রে অনেক নিয়মের পরিবর্তন এসেছে। তখন ওয়াইডের সীমানা বর্তমানের চেয়ে বেশি ছিল। নো বলের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মে ব্যতিক্রম ছিল।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বরি শাস্ত্রীর বোলিংটাও অবাক করা। ৬৬১৩ বল ডেলিভারিতে তিনিও কোনো নো বল দেননি। আর ওয়াইড দেন মাত্র একটি।
ওয়ানডের মতো টেস্টেও রয়েছে অবাক করা পরিসংখ্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অফস্পিনার ল্যান্স গিবস। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে খেলেছেন ৭৯ টেস্ট। বল ডেলিভারি করেছেন ২৭,১১৫টি। কিন্তু এর মধ্যে একটিও ওয়াইড কিংবা নো বল ছিল না! রিচার্ড হ্যাডলিও তারচেয়ে কম যান না। নিউজিল্যান্ডের এ কিংবদন্তি অলরাউন্ডার দেশের হয়ে খেলেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে ৮৬ টেস্টে ২১,৯১৮ ডেলিভারি দিয়ে একটি ওয়াইডও দেননি তিনি। অবশ্য দিয়েছেন ২২ নো বল। একইভাবে ডেরেক আন্ডারউড ৮৬ টেস্টে ২১,৮৬২ বলে এবং গ্যারি সোবার্স ৯৩ টেস্টে ২১,৫৯৯ বল ডেলিভারিতে কোনো ওয়াইড কিংবা নো দেননি।
ক্রিকেটের সব হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে রাখা শুরু হয়েছে ১৯৮০ সাল থেকে। এর আগের হিসাবকে শতভাগ নিশ্চিত বলা যায় না। এই হিসাবে পরিসংখ্যান একটু এদিন-ওদিক হতে পারে। এ ছাড়া এক সময় নো বলকে শুধু তখনই নো বল বিবেচনা করা হতো যদি ওই ডেলিভারি থেকে রান হতো। এছাড়া এখনকার চেয়ে তখনকার ওয়াইড ও নো বলের নিয়মে বেশ ভিন্নতা ছিল।
ওয়াইড এবং নো বল মানে অতিরিক্ত রান। আর এই অতিরিক্ত রানের একটি রেকর্ডে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নাম। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। ২৬৫ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ওই ম্যাচে ৪০.১ ওভার বল করে বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু এজবাস্টনে একটি অতিরিক্ত রানও দেয়নি বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো অতিরিক্ত রান না দিয়ে সবচেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড এটি। এর আগে কোনো অতিরিক্ত রান না দিয়ে সর্বোচ্চ ২২৯ রান দেয়ার ঘটনা ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের। ২০১৬ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তারা এই রেকর্ড গড়ে। তবে এই রেকর্ড এখন বাংলাদেশের।
টেস্টে এই রেকর্ডটা ভারতের দখলে। ১৯৫৫ সালে লাহোর স্টেডিয়ামে টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৩২৮ রানে অলআউট হয়। ভারতের বোলাররা ১৮৭.৫ ওভার বল করে। কিন্তু ওই ইনিংসে তারা একটিও অতিরিক্ত রান দেয়নি। এটাই এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত রান না দিয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।