ডিএমপি নিউজঃ সর্দি-কাশির ১০-৩০ শতাংশ হয় করোনা ভাইরাস দিয়ে। ২০০৩ সালের সার্স করোনা, পরবর্তীকালের মিডল ইস্টের মারস করোনার মতোই আরেক করোনা এবারের উহানের (চীন) নভেল করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটির নাম দিয়েছে কোভিড-১৯।
করোনার জীবন বৈচিত্র্য:
করোনা মূলত প্রাণীদের রোগ। বিশেষজ্ঞরা সার্স করোনা ছিল কুকুরের, মার্স করোনা উটের বলে নিশ্চিত হলেও নভেল করোনা বাদুড়ের রোগ বলে সন্দেহ করছে তবে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। ড্রপলেটে জীবাণু ১০ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকে (ফ্লু মাত্র ৪৮ ঘণ্টা)।
কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত রোগী থেকে ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে। ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) বাঁচে না করোনা ভাইরাস। ব্লিচিং বা দৈনন্দিন ব্যবহারের ডিসইনফ্যাক্টান্ট করোনা ভাইরাস নির্মূল করতে পারে।
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসকগন জানান, ড্রপলেট ইনফেকশন অর্থাৎ হাঁচি-কাশি দিয়ে ছড়ায় এ রোগ। হাঁচি-কাশি কোথাও লাগলে সেখান থেকে (ফোমাইট) ছড়ায়।
মলমূত্র বা অন্য কোনো দৈহিক রসে ছড়াতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আক্রান্ত, সন্দেহজনক আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা পর্যন্ত বিপদ নেই। নিশ্চিত করার জন্য আরটিপিসিআর ভরসা। মুখের লালা, নাকের শ্লেষ্মা ও রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা যায়।
নতুন করোনা ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে মানুষের শ্বাসতন্ত্রে। আর সে কারণেই শ্বাসতন্ত্রের রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
পরীক্ষার জন্য রোগীর কি নমুনা সংগ্রহ করা হয়ঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নিয়ম হল, এ পরীক্ষার জন্য রোগীর লালা, শ্লেষ্মা বা কফ সংগ্রহ করতে হবে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা সংরক্ষণ করা হবে স্টেরাইল টিউব বা ভায়ালে। এরপর সেই টিউব অতিমাত্রায় শীতল করে বরফের বাক্সে ভরে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে, যাতে নমুনা নষ্ট না হয়।
নমুনা এমন ল্যাবে পাঠাতে হবে, যেখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ টেস্ট কিট আছে। বাংলাদেশে আইইডিসিআরে এ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ল্যাবে নমুনা পৌঁছানোর পর হবে পরীক্ষার ব্যবস্থা। এ পরীক্ষার নাম আরটি-পিসিআর বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন। আর নমুনায় করোনা ভাইরাস বুঝতে ব্যবহার করতে হবে বিশেষ রি-এজেন্ট।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, রোগীর নমুনায় যদি করোনা ভাইরাস থেকে থাকে, তাহলে এ পরীক্ষায় তার সংখ্যা বাড়বে। ফলাফল আসবে ‘পজেটিভ’। আইইডিসিআর তখন সেই নমুনা পাঠাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ফের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। এ পরীক্ষার ফলাফল পেতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে।
নমুনা আনার পর অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা যায়। আরএন এক্সট্রাকশন করতে হয়। সেখান থেকে পিসিআর মেশিনে দিয়ে সেটা রান করাতে হয়। আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে পরীক্ষাটি শেষ করতে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে নমুনা হাতে পাওয়ার ওপর। আরটি-পিসিআরের প্রতিটি পরীক্ষায় যে টাকা খরচ হচ্ছে তা আপাতত বাহকেই বহন করছে।
আগে পরীক্ষার ফলাফল জানতে ৩-৪ দিন লাগলেও এখন ২-৩ ঘণ্টায় পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে। অন্য অসুখ থাকলে জটিলতা সন্দেহ করলে তাও পরীক্ষা করা দরকার হবে।
এ ছাড়াও করোনাভাইরসে আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগীদের জন্য রেফারেন্স হাসপাতাল হিসেবে দেশের কয়েকটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
হাসপাতালগুলো হলো- মুগদা জেনারেল হাসপাতাল (মুগদা), কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল (উত্তরা), মহানগর জেনারেল হাসপাতাল (নয়াবাজার), সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল (মহাখালী) ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল (কুর্মিটোলা)। হাসপাতালগুলোতে সোমবার (৯ মার্চ) থেকে করোনার চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চিকিৎসা কাজে ব্যবহারের জন্য মজুদ রাখা হয়েছে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও রোগ প্রতিরোধী পোশাক।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমের হটলাইন ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০৯১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ ও ০১৯২৭৭১১৭৮৫ নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক সুবিধাজনক স্থানে যেমন- স্কুল, কলেজ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিকার:
এখন পর্যন্ত চিকিৎসার প্রবর্তিত প্রটোকল নেই। অসুস্থ হয়ে পড়লে উপসর্গ অনুযায়ী প্র’তিকার করতে হবে। জটিলতার চিকিৎসা করতে হবে। প্যারাসিটামল, এন্টিহিস্টামিন কাজে লাগবে নিউমোনিয়া না হওয়া পর্যন্ত। পানি পান করতে হবে যথেষ্ট, খাদ্য খাওয়া ঠিক রাখতে হবে।
প্রাদুর্ভাবের সময়কালীন নিরাপদ থাকতে পারলেই হল। হাঁচি-কাশি (ড্রপলেট ইনফেকশন) দিয়েই মূলত ছড়ায় কোভিড-১৯ নিউমোনিয়া। কারও হলে রোগী থেকে ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে, নিজের হলে স্কুল-অফিস বাদ দিতে পারলে ভালো, বাজার-ঘাটে না গেলেই হয়। রেলিং, দরজা, গেট বা সন্দেহজনক কিছুর সংস্পর্শে এলে হাত পরিষ্কার করতে হবে, সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বারবার হাত-আঙুল চোখ, নাক-মুখে লাগানোর বদ অভ্যাস বদলাতে হবে। আক্রা’ন্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা যাবে না; আসতে হলে মাস্ক পরতে হবে। ডিসপোজেবল মাস্ক একবার পরে ফেলে দিতে হবে। অন্য দেশে ভ্রমণে গেলে সতর্কতা অত্যাবশ্যকীয়।
এ ছাড়া জ্বর, কাশি থাকলে সম্ভব হলে ভ্রমণ বাতিল করা যেতে পারে।