ডিএমপি নিউজঃ কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে পালিত হলো ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১’। জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও করোনাকালে জনসেবা করতে গিয়ে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের স্মরণে দেশব্যাপী সকল পুলিশ ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’। আজ এই দিবস উপলক্ষে মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানানো হলো কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মত্যাগকারী পুলিশ সদস্যদেরকে।
আজকের এই দিনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সেই সকল শহীদ পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। শ্রদ্ধাভরে স্মরণসহ পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং ২০২০ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে সম্মাননা স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।
২০২০ সালে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ২০৮ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। করোনা প্রকোপের কথা মাথায় রেখে নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনাকালীন সময়ে মারা যাওয়া ৬ পুলিশ সদস্যের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি। এ সময় পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয় আর্থিক অনুদানসহ ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট।
করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি মৃত সাঈদ তারিকুল হাসান বিপিএম এর পক্ষে তার স্ত্রী আজুবা সুলতানা, বগুড়ার ৪-এপিবিএন এর পুলিশ সুপার মৃত নিজাম উদ্দিনের পক্ষে তার স্ত্রী মহিমা নিজাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার মৃত মিজানুর রহমানের পক্ষে তার স্ত্রী হাছিনা ফেরদৌসী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক মৃত রাজু আহম্মেদের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা নাজনিন পলি, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এসআই মৃত নাজির উদ্দিনের পক্ষে তার স্ত্রী নার্গিস আহমেদ, ডিএমপির কনস্টেবল মৃত মোঃ ইসমাইল হোসেনের পক্ষে তার স্ত্রী শাহনাজ ও ডিএমপির কনস্টেবল ইসমাইলের পক্ষে তার ছেলে চাঁন মিয়া সম্মাননা স্বীকৃতি স্মারক গ্রহণ করেন।
কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ (পিএসসি) এ দিবসটি পালন করা হয়। আজ (১ মার্চ,২০২১) সোমবার সকাল ১০.৩০ টায় পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নির্মিত অস্থায়ী পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি দিবসের সূচনা করেন। পরে একে একে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম প্রদান করে। সেই সাথে বাজানো হয় বিউগলে করুণ সুর।
পরে, আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছরই কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মাননা জানানো হয়। এই সম্মাননা দেয়ার মূল উদ্দেশ্য, তাদের আত্মদানের স্বীকৃতি দেয়া। যে কাজ করতে গিয়ে তারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তারা যেন অনুকরণীয় হয়ে থাকেন।
মুক্তিযুদ্ধে ও কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তিনি বলেন, জনগণের জান-মাল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ জাতীয় যে কোন সংকটে জনগণের পাশে থাকে পুলিশ। মহামারী করোনার সময় পরিবারের সদস্যরা দূরে চলে গেলেও মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফনের কাজও পুলিশ সদস্যরাই করেছে। করোনাকালে নিজেদের দায়িত্বের পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ করোনা রোগীদের হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পুলিশ সদস্যরা। এই কাজ করতে গিয়ে অনেকে আত্মদান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়নশীল দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ। সবকিছু সম্ভব হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কারণে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সবসময় তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশ সদস্যরা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে পুলিশ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, নির্যাতিত মানুষের প্রথম আশ্রয়স্থল হলো পুলিশ। আমরা ঔপনিবেশিক পুলিশ না, আমরা দেশের মানুষের সেবার পুলিশ হবো। তাই পুলিশ হবে জনতার, পুলিশ হবে মানবিক। পুলিশ অনেক ধৈর্যের সাথে দেশের যে কোন সংকট মোকাবেলা করে যাচ্ছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নতুন নতুন অপরাধের যে ধরণগুলো আসছে তার মোকাবেলা করার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, দেশের মানুষের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা কাম্য নয়। পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে তারা। করোনাকালে সম্মূখযোদ্ধা হিসেবে মানুষের সেবায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৮৬ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা সুস্থ হয়ে পুনরায় তাদের দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছে। করোনার সময় কৃষকরা যখন শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারেনি, তখন আমরা শ্রমিক প্রেরণ করার ব্যবস্থা করেছি। অনেক জেলায় আমাদের পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই কৃষকের জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
তিনি আরো বলেন, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যে কোন সংকটময় মুহুর্তে পুলিশ সম্মূখসারিতে কাজ করে। জনগণের জন্য কাজ করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ জনগণের জন্য কাজ করে। জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান তিনি। আগামী বছর থেকে ‘Blue Ribbon Day’ পালন করা হবে বলেও জানান আইজিপি।
এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপিগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ২০১৭ সাল থেকে ১লা মার্চ প্রতি বছর পালন করা হচ্ছে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ ।