আছিয়া বিবি, একজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী পাকিস্তানি নাগরিক। যিনি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ৯ বছর ধরে পাকিস্তানে কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন। এরপর জীবন শঙ্কায় বিভিন্ন দেশের কাছে পরিবারসহ আশ্রয় চান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহ আগে কানাডায় গিয়েছেন তিনি।
কিন্তু কানাডায় গিয়েও তার প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো না। একটি অজ্ঞাত পরিচয় ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন এবার কানাডায় গিয়ে আছিয়াকে হত্যার হুমকি দিলো। ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রকাশ করে এই হুমকি দেয় ওই ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন।
ভিডিওতে এক অজ্ঞাতপরিচয় জঙ্গিকে বলতে শোনা যায়, আছিয়া বিবিকে কানাডায় তার কর্মের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে এবং সে পুনরায় ইসলাম ধর্মকে অবমাননামূলক উক্তি করবে। তাই তাকে হত্যা করতেই হবে।
কিন্তু ওই জঙ্গি তার চেহারা দেখায়নি এবং কোন সংগঠনের হয়ে তিনি কাজ করছে তাও বলেননি।অবশ্য কানাডার কর্তৃপক্ষ আছিয়া বিবি সে দেশের কোথায় আছেন সে ব্যাপারে কোনো কিছুই প্রকাশ করেনি।
২০০৯ সালে মুসলিম প্রতিবেশীদের একটি কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করার জেরে তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে আছিয়া বিবি গ্রেফতার হন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। শুরু থেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও ২০১০ সালে নিম্ন আদালত তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন; হাইকোর্টও পরে একই সাজা বহাল রাখেন। আছিয়ার মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনা হয়, একে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলেও অনেকে অভিহিত করেন।
গত বছর অক্টোবরে মৃত্যুদণ্ডের রায় বদলে আছিয়াকে খালাস দেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দেশটির কট্টরপন্থী মুসলিম দলগুলো তুমুল বিক্ষোভ করে। তারা আছিয়ার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবি জানায় এবং তার দেশত্যাগে বাধা দিতে সরকারের ওপর চাপও সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে সহিংসতা ও বিক্ষোভ থামাতে আছিয়ার দেশত্যাগে বাধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকার।
এর আগে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছিয়ার স্বামী আশিক মসিহ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় দিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
এদিকে মাওলানা ইউসুফ কোরেশি নামে পাকিস্তানের এক মৌলবাদী নেতা আছিয়া বিবিকে হত্যার জন্য পাকিস্তানি মুদ্রায় ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন।