ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- কাভার্ডভ্যানের চালক আনিসুর রহমান ও উবারের চালক মোঃ সুমন হোসেন। ঘাতক কাভার্ডভ্যান ও রাইড শেয়ারিংয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) আশুলিয়ার বাইশ মাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যানটি জব্দসহ চালককে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে উবার মোটরবাইক চালক সুমন হোসেনকে আটক করে শেরেবাংলা থানা পুলিশ।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১.৩০টায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম (বার), পিপিএম।
ঘটনা সম্পর্কে ডিসি তেজগাঁও বলেন, ২৫ এপ্রিল সকাল ১০ টা ৪৬ মিনিটে রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহত হয়েছেন। লাবণ্য শ্যামলি এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে উবারের বাইকে করে খিলগাঁও ছায়াবিথী এলাকায় যাচ্ছিলেন। উবার বাইক চালক সুমন বেপরোয়া গতিতে লাবণ্যকে নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন । বেপরোয়া গতির বাইকটি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যান বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় লাবণ্য বাইক থেকে পড়ে যান এবং কাভার্ডভ্যানের চাকায় চাপা পড়েন। এরপর পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লাবণ্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডিসি তেজগাঁও আরো বলেন, ঘটনার পর থেকেই উবার চালক ও ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালককে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশে-পাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দূর্ঘটনার স্পষ্ট কিছু পাওয়া যাচ্ছিলোনা। বাইক চালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পুলিশ যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে সে যেই ঠিকানা দিয়েছিলো, সে অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভুল ঠিকানা দিয়েছিলো।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ডিসি তেজগাঁও বলেন, চালককে খুঁজে পেতে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষনিকভাবে তথ্য চাওয়া হলেও তারা কোন সহযোগিতা করেননি। মোটরবাইক চালক সুমন উবারে রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিল। উবারের কাছে তার যে ঠিকানা ছিলো সেখানে খোঁজ নিয়েও সত্যতা পাওয়া যায়নি। উবারের এসব গাফিলতির কারণে সুমনকে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় পরদিন ২৪ এপ্রিল ভোরে মোহাম্মদপুর থেকে বাইক চালক সুমনকে আটকসহ বাইকটি জব্দ করা হয়।
ডিসি তেজগাঁও বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, উবার চালক সুমনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও সে অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছিলো। এদিকে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘাতক কাভার্ডভ্যানটি পাওয়া যায়। ফুটেজে ভ্যানটির নাম্বার পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তেজগাঁও এলাকার অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস থেকে ঘাতক চালক আনিসুরকে গ্রেফতার করা হয়।
বাইক চালক ও কাভার্ডভ্যান চালককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, দুইজনই বেপরোয়া গতিতে ড্রাইভ করছিলেন। বাইকের চেয়ে যেহেতু কাভার্ডভ্যানের গতি বেশি, সেহেতু কাভার্ড ভ্যানটি বাইকটিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয়। তখনই বাইকের যাত্রী লাবণ্য রাস্তায় পড়ে যান এবং কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ঠ হন।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কোন ব্যক্তির বিষয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করে ফেললো উবার কর্তৃপক্ষ। যার ফলে রাইডার সুমনে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো। যে কোন ঘটনার পর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দ্রুত চেষ্টা করি, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের পদে পদে বাধা পেতে হলো।
তাছাড়া, উবারসহ এসব রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো বানিজ্যিকভাবে চালানোর জন্য চালকের শারিরীক ও মানষিক দক্ষতা রয়েছে কি না সেগুলোও যাচাই-বাছাই করেন না। রাইড শেয়ারিংয়ে আরোহীর ব্যবহৃত হেলমেটের গুনাগতমান খুবই নিম্ন। যার কারণে দুর্ঘটনা হলে ঐ হেলমেট দিয়ে সেইফ থাকা যায় না।
গাফিলতির জন্য উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার আরো তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় যারই গাফিলতির প্রমান পাওয়া যাক, তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।