ডিএমপি নিউজঃ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করাসহ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজী রহমান ও ফাতেমা খাতুন। অপর গ্রেফতারকৃত অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার নাম প্রকাশ করা হলো না।
রবিবার (২ অক্টোবর ২০২২) শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ সোমবার (৩ অক্টোবর ২০২২) বেলা ৩টায় লালবাগ বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ সংক্রান্তে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জাফর হোসেন।
তিনি বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ কামরাঙ্গীরচর থানার হাসাননগরের একটি বাসায় পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে এবং বাসাটি তালাবদ্ধ মর্মে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ সংবাদ পায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসার তালা ভেঙ্গে বাসা থেকে একজন ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ উক্ত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে জানতে পারে যে, তার নাম ফজল মিয়া। অজ্ঞাতনামারা ভিকটিমের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং ভিকটিমের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে। ঘটনার পর ভিকটিমের ছোট ভাই মোঃ সাজু মিয়া ১ অক্টোবর ২০২২ কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো বলেন, মামলার তদন্তকালে লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কে. এন. রায় নিয়তির নেতৃত্বে একটি চৌকষ টীম সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত ফাতেমা বেগম ভিকটিম ফজল মিয়ার পঞ্চম স্ত্রী এবং ভিকটিম ফজল মিয়া ফাতেমা বেগমের দ্বিতীয় স্বামী। ভিকটিম শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা শহরে ভিক্ষাবৃত্তি করতো। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা খাতুনের প্রথম স্বামী গাজী রহমান ও ভিকটিম ফজল মিয়া একসাথে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভিক্ষা করতো। সেই সূত্রে ফাতেমা খাতুনের সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয় এবং তারা দুই বছর পূর্বে বিবাহ করে। বিবাহের পর ফাতেমা খাতুন তার প্রথম পক্ষের দুই মেয়ে সহ ফজল মিয়ার সাথে কামরাঙ্গীরচর থানার হাসাননগরে এক বাসায় ভাড়া থাকতো। ভিকটিম ফজল মিয়া ফাতেমা বেগমের প্রথম পক্ষের মেয়ে মিতুকে প্রায়ই যৌন হয়রানি করতো। এ বিষয়ে ফাতেমা ফজল মিয়াকে নিষেধ করলেও সে কোন কর্ণপাত না করে তার এই অনৈতিক কামনা চরিতার্থ করার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ফাতেমা খাতুন ও তার বড় মেয়ে বাড়ির বাইরে গেলে ভিকটিম ফজল মিয়া ফাতেমা খাতুনের ছোট মেয়ে মিতুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোর জবরদস্তি করতে থাকে। বাড়ি ফিরে এসে ফাতেমা খাতুন ধস্তাধস্তির বিষয়টি দেখতে পায় এবং ফজল মিয়াকে বাধা প্রদান করে ও ভৎসনা করে। এতে ভিকটিম ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমা খাতুন ও তার মেয়েকে মারধর করে এবং সৎ মেয়ে মিতুকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা ভিকটিমের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলে। ভিকটিম শারিরীক প্রতিবন্ধী, ধর্ষণের বিষয়ে কোর্ট এবং পুলিশ তার কিছুই করবে না বলে ফাতেমাকে জানায়।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন গত ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় গ্রেফতারকৃত ফাতেমা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুধের সাথে ৪/৫ টা ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিমকে খেতে দেয়। ঘুমের ঔষধ খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিকটিম ঘুমিয়ে পড়ে। ভিকটিম ঘুমিয়ে পড়লে ফাতেমা খাতুন তার প্রথম স্বামী গাজী রহমানকে ফোন করে তার বাসায় ডাকে। এরপর ফাতেমা বেগম ঘুমন্ত ভিকটিমের হাত ও পা গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে, গ্রেফতারকৃত গাজী রহমান ভিকটিমের বুক চেপে ধরেন এবং ফাতেমা খাতুনের মেয়ে মিতু ভিকটিমের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ফাতেমা খাতুন ব্লেড দিয়ে ভিকটিমের পুরুষাঙ্গ কেটে জানালা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর তারা ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের কামরাঙ্গীরচর থানার রুজুকৃত মামলায় বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ফাতেমা খাতুন ও গাজী রহমান বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে মর্মে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জাফর হোসেন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম এর নির্দেশনায় অভিযানটি পরিচালিত হয়।