কেস ফলোআপঃ ০২
ঘটনার তারিখ ও সময়ঃ ২৯ জুলাই, ২০১৮ ইং সময় বেলা ১২.৩০ টা।
ঘটনাস্থলঃ ডিএমপি’র ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন হোটেল রেডিসনের বিপরীত পার্শ্বে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার এর ঢালের সামনে রাস্তার পাশে।
বাদীঃ মোঃ জাহাঙ্গীর (৪৮) (নিহত ছাত্রী দিয়া খানম মিম এর পিতা)।
মামলা নং ও তারিখঃ ক্যান্টনমেন্ট থানার মামলা নং ৩৩, তারিখ: ২৯/০৭/২০১৮ ইং।
ধারাঃ ২৭৯/৩০৪ (খ) সংযোজিত ৩০৪ দি পেনাল কোড।
তদন্তকারী সংস্থাঃ গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা।
মোট অভিযুক্তঃ ০৬ জন (গ্রেফতার ০৪ জন পলাতক ০২ জন)।
মোট সাক্ষীঃ ৪১ জন (এর মধ্যে ১১ জন ভিকটিম সাক্ষী)।
মোট আহতঃ ১১ জন।
মোট নিহতঃ ০২ জন (শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী)।
জব্দকৃত আলামতের বিবরণঃ জাবালে নূর পরিবহনের ৩টি বাস, যথাক্রমে- ১। রেজিঃ নং ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭, ২। রেজিঃ নং- ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৬৫৭, এবং ৩। রেজিঃ নং ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৫৮০। যাহা উত্তেজিত ছাত্র/ছাত্রী ও জনতা কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ। ৪। মোঃ মাসুম বিল্লাহর ড্রাইভিং লাইসেন্স নং- FP 0013993CL0006, ফরিদপুর বিআরটিএ, ৫। মোঃ জোবায়ের সুমন এর ড্রাইভিং লাইসেন্স নং- DK-0348525L00005, বিআরটিএ, ঢাকা (উওর), ৬। সোহাগ আলী এর ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি নং- DK 0432492L00004, বিআরটিএ, মেট্রো-১, ঢাকা।
কার্য়বিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিঃ ০৩ জন।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ বাদী মোঃ জাহাঙ্গীর (৪৮), থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ করেন যে, তার মেয়ে দিয়া খানম মিম (১৭), শহিদ রমিজ উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ এর এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী। গত ২৯/০৭/২০১৮ ইং তারিখে দুপুর অনুমান ১২.৩০ টার সময় তার মেয়ে দিয়া খানম মিম ক্লাস শেষে একই কলেজের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন হোটেল রেডিসনের বিপরীত পার্শ্বে জিল্লুর রহমান ফ্ল্যাইওভার এর ঢালের সামনে রাস্তার পাশে বাসে উঠার জন্য অপেক্ষা করছিল। অপেক্ষা করাকালীন সময় জাবালে নূর পরিবহণের একটি বাস যাহার নাম্বার ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭, এর অজ্ঞাতনামা চালক বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে গাড়ী চালিয়ে তার মেয়েসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উপর উঠিয়ে দিলে দিয়া খানম মিমসহ ১৩/১৪ জন শিক্ষার্থী গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। উল্লেখিত বাসের অজ্ঞাতনামা চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আশ-পাশের লোকজন তার মেয়েসহ জখম প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাদীর মেয়ে দিয়া খানম মিম এবং আব্দুল করিম রাজীবকে (১৮) মৃত ঘোষনা করেন। অন্যান্য আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচ এ ভর্তি করা হয়।
তদন্তঃ সর্বাধিক আলোচিত এই মামলাটি তদন্ত করে ডিএমপি’র গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ। তদন্তকালে জানা যায় জাবালে নূর পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব- ১১-৯২৯৭ ও ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭) বাস দুটির ড্রাইভার ও হেলপারগণ নিজের এবং মালিকের স্বার্থের জন্য অধিক ভাড়া পাওয়ার আশায় প্রতিযোগিতা করে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে অত্র ঘটনা সংঘটিত করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা অত্র ঘটনার সাথে মোট ০৬ জনের সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। ০৬ জনের মধ্যে ০৪ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ০২ জন পলাতক রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত ০৪ জন হলোঃ
১। মোঃ মাসুম বিল্লাহ (৩০), পিতা- মোঃ আঃ বারেক হাওলাদার, মাতা- মোসাঃ নুরজাহান বেগম, সাং- উত্তর চাকামাইয়া, ১নং ওয়ার্ড (চাকামাইয়া ইউপি), রুস্তম আলী হাওলাদার বাড়ী, পোষ্ট-পূর্ব চাকামইয়া, থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালী, বর্তমান সাং-আগারগাঁও তালতলা কবরস্থান গলি, থানা-শেরে-বাংলানগর, ঢাকা।
২। মোঃ এনায়েত হোসেন (৩৮), পিতা-মোবারক হোসেন, মাতা- মৃত- মোসাঃ বিলকিস বেগম, সাং-লামছড়ি (হাতেম আলী সর্দারের বাড়ীর পার্শ্বে) পোঃ-চরবাড়ীয়া, থানা-কোতয়ালী, বিএমপি বরিশাল, বর্তমান কাজী অফিস সংলগ্ন, রোড নং-০২, শ্যামলী, থানা-শেরে বাংলানগর, ঢাকা ।
৩। মোঃ শাহাদৎ হোসেন আকন্দ (৬০), পিতা-মৃত হামিদুর রহমান আকন্দ, সাং-পূর্বপাড় দিঘলী (চকপাড়া), পোঃ-ছোনটিয়া বাজার, থানা-সদর, জেলা-জামালপুর ।
৪। মোঃ জোবায়ের সুমন (৩৬), পিতা-আব্দুল মান্নান হাওলাদার, মাতা-জাহানারা বেগম, সাং-গলাচিপা (২নং ব্রিজ), পোস্ট-ইটবাড়িয়া, থানা-সদর, জেলা-পটুয়াখালী, বর্তমান বাসা নং-৯৫/খ, রোড নং-৭, উত্তরা বিসিক, মিরপুর-১, থানা-শাহ আলী, ঢাকা।
পলাতক ০২ জন হলোঃ
১। মোঃ আসাদ কাজী (৪৫), পিতা-মৃত মোঃ মতিউর রহমান @ মতি কাজী, মাতা-মৃত হাজেরা বেগম, সাং-সোনাতন্দি মধ্যপাড়া, পোস্ট-বল্লবদি, থানা-সালতা, জেলা-ফরিদপুর, বর্তমান সাং-কাউনদিয়া (হাই স্কুলের পাশে), থানা-সাভার, জেলা-ঢাকা।
২। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) পিতা-মৃত আব্দুল কাদের বেপারী, মাতা-খোরশেদা বেগম, সাং-মুদাফফর (বেপারী বাড়ী), পোষ্ট-মোহেনপুর, ইউপি নং-৭, থানা-মতলব (উত্তর), জেলা-চাঁদপুর, বর্তমান ৩৩০/৩, উত্তর ইব্রাহিমপুর, থানা-কাফরুল, ঢাকা, (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৬৫৭ এর মালিক)।
মামলার বর্তমান অবস্থাঃ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই চালকের রেষারেষিতে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬) নিহতের ঘটনায় করা মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের চালকসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১ ডিসেম্বর ২০১৯) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইমরুল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন,বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং সহকারী মোঃ আসাদ কাজি। এছাড়াও জাবালে নূর পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও সহকারী এনায়েত হোসেনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।