জালিয়াতীর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাতকারী এক পলাতক প্রতারককে তিন বছর পর গ্রেফতার করলো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃত ওই প্রতারকের নাম এহসানুল হক ওরফে শিমু (৪৭)। তাকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ সকাল সাড়ে দশটায় শেরেবাংলা নগর থানার তালতলা এলাকা হতে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর একটি বিশেষ টিম।
পিবিআই সূত্রে জানানো হয়, মামলার বাদী শাহনাজ শম্মী (৪৬) অভিযুক্ত এহসানুল হক শিমু বাদীর পল্লবীর রূপনগরে তার নামীয় ৩ কাঠা জমি বিক্রির সময় সাহায্য করে এবং জমির বিক্রির ১ কোটি টাকা বাদী উক্ত এহসানুল হকের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ এর রোকেয়া স্মরণীর শাখায় দুটি হিসাব নম্বরে জমা দেন। পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ৬ বছর মেয়াদী ডবল বেনিফিটের মেয়াদী হিসাব নম্বরে ও বাকী পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ৩ মাস অন্তর মুনাফা প্রদেয় ৫ বছর মেয়াদী হিসাব নম্বরে জমা রাখে।
অভিযুক্ত এহসানুল হক শিমু বাদীকে জানায়, ব্যাংক ৩ মাস মেয়াদী হিসাবের সুদের হার কমিয়ে ১৩.৫০ টাকার স্থলে ১১.৫০ টাকা করতে চায়। আরো জানায় ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ মতিঝিল কর্পোরেট শাখায় তার স্ত্রীর বড় ভাই মোঃ আবু সাঈদ আছে। তার সাথে কথা হয়েছে যে উক্ত ব্যাংক ৩ মাস মেয়াদী আমানতের জন্য ১৪.৫০ টাকা হারে সুদ প্রদান করবে। সে এভাবে বুঝিয়ে বাদীর উক্ত দুটি মেয়াদী হিসাবের ১ কোটি টাকা স্থানান্তর করে কথিত মতিঝিল কর্পোরেট শাখায় হিসাব খোলার জন্য বাদীকে রাজি করায়। বাদী সরল বিশ্বাসে ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ রোকেয়া স্মরনী শাখায় ৬ বৎসর মেয়াদী এবং ৩ মাস মেয়াদী হিসাবের দুটির ইনস্ট্রুমেন্ট এর বিপরীতে সই স্বাক্ষর করে দেন এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ কর্পোরেট শাখায় অনুরূপ দুইটি হিসাব খোলার জন্য উক্ত দুইটি ইনস্ট্রুমেন্ট এহসানুল হক শিমুকে প্রদান করেন।
এহসানুল হক শিমু বাদীর নিকট হতে তার স্বাক্ষরিত সঞ্চয়ী একাউন্টের একটা ব্যাংক চেক গ্রহণ করে এবং বলে হিসাব ট্রান্সফার এর জন্য এবং কর্পোরেট শাখার হিসাব খোলার জন্য সামান্য কিছু টাকা প্রয়োজন হবে। তা সে উক্ত চেকে লিখে ব্যাংক হতে গ্রহণ করবে। বাদী সরল বিশ্বাসে উক্ত ব্যাংক চেকটি প্রদান করলে এহসানুল হক শিমু, ব্যাংক কর্মচারী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজসে বাদীর ৬ বৎসর মেয়াদী হিসাবের বিপরীতে তার সই স্বাক্ষর ও লেখা জাল করে বাদীকে গ্যারান্টার দেখিয়ে চল্লিশ লক্ষ টাকা এহসানুল হক শিমুর প্রতিষ্ঠান গড়াই অটো মোবাইলস এর নামে এসওডি ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাত করে।
প্রদেয় চেকের মাধ্যমে আসামী তার মালিকানাধীন উক্ত প্রতিষ্ঠান এর নামীয় চলতি হিসাবে একান্ন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে নেয়। উক্ত টাকা উত্তোলণের সময় ব্যাংক কর্তৃক বাদীকে কোন কিছুই অবগত করেনি।
অষ্ট্রেলীয় এ্যাম্বাসি বাদীর ছেলের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার বিষয় নিয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট দেখতে চাইলে বাদী এহসানুল হক উরফে শিমুর প্রদত্ত দুইটি ব্যাংক ইনস্ট্রুমেন্ট ও রোকেয়া স্মারণী শাখার ম্যানেজারের দেয়া সলভেন্সী সার্টিফিকেট দাখিল করেন।
অষ্ট্রেলীয় এ্যাম্বাসি উক্ত মেয়াদী হিসাব দুটির খোঁজ নিয়ে জানায় যে, আসামী এহসানুল হক শিমুর প্রদত্ত ব্যাংক ইনস্ট্রুমেন্ট ও রোকেয়া স্মারণী শাখার ম্যানেজারের দেয়া সলভেন্সী সার্টিফিকেট জাল এবং এ্যাম্বাসী বাদীর ছেলেকে ৩ বছরের জন্য অষ্ট্রেলিয়া যাওয়া স্থগিত করে দেয়। পরে বাদী ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখেন এহসানুল হক শিমু অন্যান্যদের সহায়তায় বাদীর ব্যাংকের হিসাবে হতে মোট এক কোটি এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাত করে। পরে বাদী আরো জানতে পারেন যে, ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ মতিঝিল কর্পোরেট শাখার কোন অস্তিত্ব নেই।
উক্ত ঘটনায় শাহনাজ শম্মী এহসানুল হক ওরফে শিমুর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতীর মাধ্যমে টাকা আত্মসাত করায় শেরেবাংলা নগর থানায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তদন্ত করা হয়। পরে সিআইডি পুলিশ কর্তৃক দীর্ঘ প্রায় চার বছর তদন্ত করে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত প্রধান অভিযুক্ত এহসানুল হক ওরফে শিমু গ্রেফতার না হওয়ায় উক্ত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে বাদী না-রাজীর আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই এর তদন্তকারী অফিসারের নেতৃত্তে¡ একটি টীম গত ২৪/০৪/২০১৯ খ্রিঃ সকাল ১০.৩০ টায় শেরেবাংলা নগর থানার তালতলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ বছর পলাতক এহসানুল হক ওরফে শিমুকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পিবিআই।