জীবন কখনো কখনো ভোজবাজির মতো পাল্টে যায়। কখন কোথা থেকে যে মানুষের গৌরবময় জীবনের শুরু হয় বলা মুশকিল। প্রতিভাবানদের ক্ষেত্রে এটা বলা তো আরো কঠিন। ভাগ্য আর পরিশ্রমের সমন্বয়ে কেউ কেউ উদাহরণ তৈরি করেন। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের পেশাদার ভুবনে এমন কিছু খেলোয়াড় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন যাদের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন পেশায়। কারও কারও ক্ষেত্রে সে পেশা সম্মানজনক হলেও অনেকের প্রথম পেশাই ছিল অত্যন্ত সাধারণ মানের। প্রথমজীবনে হয়তো তারা কল্পনা করতেন একদিন মাঠ কাঁপাবেন। পরে সত্য হয়েছে তাদের সে স্বপ্ন।
রেকর্ড গড়েছেন, সফল ও নন্দিত হয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপেও রয়েছেন তেমন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। আবার কেউ কেউ খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। এমপি, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচিত হয়েছেন। কেউ শোবিজে, অন্য ক্রীড়ায়, কোচিংয়ে বা ধারাভাষ্যে যুক্ত হয়েছেন। বেশিরভাগই হেঁটেছেন বা হাঁটছেন ব্যবসার পথে। জীবন বাস্তবতায় কেউ কেউ ফিরেছেন নানা সাধারণ পেশায়। বিচিত্র যেসব পেশার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই ক্রিকেটের। ক্রিকেটারদের পেশাগত জীবন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাদায়ক হলেও কিছুক্ষেত্রে তা জীবনকে দিয়ে যায় সতর্কবার্তা।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ মাতাচ্ছেন ক্যারিবীয় পেস বোলার শেলডন কটরেল। পেশাদার ক্রিকেটে আসার আগে তিনি কাজ করেছেন পুলিশ বিভাগে। চলতি বিশ্বকাপে দর্শকদের উইকেট শিকারের পর শেল কটরেলের উদযাপনও আনন্দ দিচ্ছে দর্শকদের। কয়েক বছর আগেও ক্রিকেটে গতির ঝড় তুলতেন নিউজিল্যান্ডের শেন বন্ড। নিউজিল্যান্ড পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। ডানহাতি অজি পেসার জো ডাওয়েস দায়িত্ব পালন করেছেন ভারতীয় দলের বোলিং কোচের। দীর্ঘ আট বছর কুইন্সল্যান্ড পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করেছেন তিনি। ২০০৭ বিশ্বকাপে স্লিপে দাঁড়িয়ে ভারতের ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পার একটি অসাধারণ ক্যাচ ধরে বিখ্যাত হওয়া বারমুডার ক্রিকেটার ডোয়েন লেভারক ছিলেন দেশটির পুলিশ অফিসার। ভারতীয় জাতীয় দলের হয়ে ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা বোলার যোগিন্দর শর্মা অবসর নেয়ার পর পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন। বর্তমানে হরিয়ানা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তিনি।
ক্যারিবীয় পেসের স্বর্ণযুগের শেষ জুটি হিসেবে খ্যাতি রয়েছেন কোর্টনি ওয়ালস-কার্টলি অ্যামব্রোসের। ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর কার্টলি অ্যামব্রোস জনপ্রিয় ক্যারিবীয় ব্যান্ড ‘ড্রেড অ্যান্ড দ্য ব্যাল্ডহেড’এর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৬ বছর ধরে ওই ব্যান্ডের লিড বেস গিটারিস্ট তিনি। ইংলিশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক টনি লুইস বেহলিাবাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন ওয়েলসের জাতীয় যুব অর্কেস্টায়। ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর বিবিসি ও টেলিগ্রাফে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন তিনি। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য সলিল আঙ্কোলা অবসরের পর শোবিজে যুক্ত হন। হিন্দি চলচ্চিত্র কুরুক্ষেত্র, পিতা, চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে, সাইলেন্স প্লিজ…দ্য ড্রেসিং রুম-এ অভিনয় করেন। অভিনয়ে নেমেছেন আরেক ভারতীয় ক্রিকেটার পেস বোলার শান্তাকুমারণ শ্রীশান্ত। ভারতের লিজেন্ডারি সুুনীল গাভাস্কার, ক্রিকেটার ও সাবেক কোচ সন্দ্বীপ পাতিল, বাঁহাতি ওপেনার সদাগোপান রমেশ, বিনোদ কাম্বলি ও অজয় জাদেজা অভিনয় জগতে নাম লেখালেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি।
মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে বলা হয় টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা। জ্যামাইকার গরিব ঘরের সন্তান গেইল শৈশবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল কুড়াতেন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম ১০০ টেস্ট উইকেট শিকারি বোলার ডিক ম্যাটজ ক্রিকেটের পাশাপাশি ট্যাক্সি চালাতেন। ভারতের বিশ্বকাপসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতায় শিরোপা অর্জনে নেতৃত্ব দেয়া অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনী প্রথমজীবনে খড়গপুর রেল স্টেশনের টিকিট পরীক্ষকের কাজ করতেন। অজি পেস বোলার মিচেল জনসন জাতীয় দলের ঢোকার আগে ট্রাক চালাতেন। অজি স্পিনার ব্রাড হজ আগে কাজ করতেন স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে টানা ১৯ বছর ক্রিকেট খেলা মুহাম্মদ তকির দেশটির একটি ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার ছিলেন। পাকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক স্পিনার আরশাদ খান ২০০৬ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে তিনি ট্যাক্সি চালান এখন। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইনআপের আস্থার প্রতীক ডেভিড ওয়ার্নার পেশাদার ক্রিকেটে নাম লেখানোর আগে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটি দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতেন। পাকিস্তানের মারকুটে ব্যাটসম্যান ফখর জামান প্রথম জীবনে দেশটির নৌবাহিনীর নাবিক ছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য মুনাফ প্যাটেল প্রথম জীবনে একটি টাইলস কোম্পানিতে কাজ করতেন। পাকিস্তান ক্রিকেটের দেয়ালখ্যাত মোহাম্মদ ইউসুফ পেশাদার ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার আগে রুটি-রুজির জন্য বাহাওয়ালপুরে রিকশাও চালিয়েছেন।
ইংলিশ লিজেন্ড ডব্লিউ জি গ্রেস চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী ছিলেন। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা গ্রেস খ্যাতি পেয়েছিলেন ‘দ্য ডক্টর’। সাবেক অজি অধিনায়ক মন্টি নোবল পেশাদার দন্ত চিকিৎসক হিসেবে নানা দেশ ভ্রমণের সময় উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও দন্ত চিকিৎসার নতুন কৌশল শিখতেন। আশিরদশকে ক্যারিবিয়ান সাড়া জাগানো ফাস্ট বোলার দীর্ঘদেহী কলিন ক্রফট ক্রিকেটের পাশাপাশি একটি এয়ারলাইন্সের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ছিলেন। বার্বাডোজে জন্ম নেয়া ইংলিশ পেসার রিকি এলকক অবসর নেয়ার পর বার্বাডোজ ফিরে একটি বাণিজ্যিক বিমানের পাইলট হিসেবে যোগ দেন। হংকং জাতীয় দলের ক্রিকেটার ক্রিস্টোফার কার্টার পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে মাত্র ২১ বছর বয়সেই অবসর চলে যান। ঐতিহাসিক বডিলাইন সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলের ক্যাপ্টেন ব্যাটসম্যান বিল উডফুল ও সাবেক টেস্ট ব্যাটসম্যান পল শ্যাহান গণিতের শিক্ষক ছিলেন। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের স্পিন অলরাউন্ডার জাফর আনসারী আইন পেশায় যোগ দিতে ক্রিকেট থেকে দ্রুত অবসরে যান।
ইংল্যান্ড জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি অবসরে গিয়ে লেখালেখি ও সাইকো অ্যানালিস্টের কাজ শুরু করেন। বৃটিশ সাইকো অ্যানালিটিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্টও হয়েছেন পরে। ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড শেফার্ড খেলোয়াড়ের চেয়ে জনপ্রিয় হন আম্পায়ারের ভূমিকায়। ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি প্রথমে ঝুঁকে পড়েন ধর্মকর্মে এবং যাজক হন। পরে আম্পায়ারিংয়ে যুক্ত হন। ইংল্যান্ডের ক্রিস লিউয়িস ক্রিকেট থেকে অবসরে গিয়েই জড়িয়ে পড়েন মাদক ব্যবসায়। মাদক চোরাচালানের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ১৩ বছরের জেল হয় লিউয়িসের। আইপিএল’র দ্বিতীয় আসরে রাজস্থানের হয়ে খেলা বাঁহাতি ফাস্ট বোলার কামরান খান মনোযোগ কেড়েছিলেন ভিন্ন ধাঁচের বোলিং স্টাইলে। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়ার সন্দেহ প্রকাশ করার পর ক্যারিয়ার থেকে গেলে কামরান ফিরে যান তার প্রথম জীবনের পেশা কৃষিকর্মে। আইপিএলে কিং ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে রাঙানো মনজুর আহমেদ দার কাশ্মীরের ৬০ টাকা রোজের দিনমজুর ছিলেন।
ইংল্যান্ডের বোলার চার্লস জোসেফ হার্ট পেশাদার ক্রিকেটে নাম লেখানোর আগে ইংলিশ জাতীয় দলের ফুটবলার ছিলেন। ফিফা বিশ্বকাপসহ ২০১৪ ও ২০১৬ ইউরো কাপের ইংল্যান্ড দলের নির্ভরযোগ্য এই গোলকিপার জাতীয় দলের হয়ে ৭৫টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। পাহারা দিয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবের গোলবার। ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে ক্ষোভে গ্লাভস খুলে রেখে যোগ দেন ক্রিকেটচর্চায়। ‘দ্য আল্টিমেট প্লেয়ার অব ক্রিকেট’ খ্যাত এবি ডি ভিলিয়ার্স মাঠের চারিদিকে ব্যাট চালাতে পারতেন সমানে। তাই তার আরেক নাম ছিল মি. ৩৬০। ভিলিয়াস একাধারে রাগবি, হকি, ব্যাডমিন্টন ও ক্রিকেট খেলতেন। জাতীয়পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ভিলিয়ার্সের নাম ছিল জাতীয় হকি দলের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। সবচেয়ে বড় বিষয় তিনি বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য পেয়েছেন নেলসন মেন্ডেলা মেডেল। সাবেক অজি অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচ হিসেবে নাম কামালেও প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন পেশাদার বেসবল খেলোয়াড়। বর্তমান অস্ট্রেলিয়া দলের অফস্পিন ভরসা নাথান লায়ন জাতীয় দলে প্রবেশের আগে ক্যানাবেরায় পিচ কিউরেটর হিসেবে কাজ করতেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে কেনিয়ার যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল তখন দীপক সুদাসামা দেশটির অন্যতম ক্রিকেটার ছিলেন। টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে দীপক ১৯৮২ সালে ভারতের কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন। বৃটিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ক্রিকেট ছাড়ার পর প্রফেশনাল বক্সার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে প্রথম ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নজর কাড়েন। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অলরাউন্ডার অ্যাডাম হোলিওক অবসরের পর কোটি পাউন্ডের সম্পত্তির মামলায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হন। পরে রোজগারের আশায় জড়িয়ে পড়েন ভয়ঙ্কর কেজ ফাইটিং পেশায়। দুর্ঘটনায় পড়ে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের খেলোয়াড় ডেভিড লরেন্স ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হবার পর শরীরচর্চা শুরু করে পরিণত হন পেশাদার বডিবিল্ডারে। ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর কপিল দেবসহ অনেকেই নতুন করে গল্ফে ক্যারিয়ার গড়েছেন।
ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের দেখা গেছে রাজনীতির ময়দানে। ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান। ১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে নেমে গঠন করেন নতুন দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনিই প্রথম কোনো ক্রিকেটার প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা অবসরের পর রাজনীতিতে নামেন। এখন তিনি দেশটির বন্দর ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী ব্যাটসম্যান সনাৎ জয়সুরিয়া রাজনীতিতে নেমে এমপি নির্বাচিত ও মাহিন্দা রাজাপাকশের মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগমত ঝা আজাদের পুত্র ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য কীর্তি ভগবত ঝা আজাদ একাধিকবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। নভোজিৎ সিং সিধু ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে অমৃতসর থেকে এমপি হলেও পরে কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি রিয়েলিটি শো-ও করেন। ভারতের অন্যতম সফল সাবেক অধিনায়ক আজহার উদ্দিন কংগ্রেসে যোগ দিয়ে এমপি হন। টেন্ডুলকারের স্কুল বন্ধু বিনোদ কাম্বলি অবসরে যাবার পর বলিউডে অভিনয়পর্ব পার করে রাজনীতিতে যোগ দিলেও সাফল্য পাননি। ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক পতৌদির নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সাফল্য পাননি। একবিংশ শতকের প্রথম দশকে ক্রিকেটে পাল্লা দিয়ে গতির ঝড় তুলেছেন পাকিস্তানের শোয়েব আকতার ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি। ইতিহাসে তারাই সর্বোচ্চ প্রথম একশ মাইল গতিতে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েছেন। ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবার পর দুইজনই সংগীতের জগতে নাম লিখিয়েছেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী আশা ভোসলের সঙ্গে ডুয়েট করেছেন ব্রেট লি। নিয়মিত গান করেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল ও অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান শেন ওয়াটসন। ক্রিকেটের পাশাপাশি চিত্রশিল্পের চর্চা করতেন ইংল্যান্ডের সাবেক উইকেট কিপার জ্যাক রাসেল। চিত্রশিল্পী হিসেবেও বেশ সুনাম রয়েছে তার। সাউথ গ্লুচেস্টশায়ারে রয়েছে তার সমৃদ্ধ চিত্র গ্যালারি।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পরও ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বেশ ক’জন ভারতীয় ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে এক ইনিংসে ১০ ও এক ম্যাচে ১৯ উইকেট সংগ্রহের বিরল রেকর্ডধারী কিংবদন্তী লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে মেকানিক্যাল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন তথ্যপ্রযুক্তি, জাভাগাল শ্রীনাথ ইন্সট্রুমেন্ট টেকনোলজিতে ডিগ্রিধারী। ভারতীয় সাবেক ওপেনার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষে ড্রপ দিয়ে ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯৬০-৭০’র দশকে ভারতীয় স্পিন বোলিংকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দেয়া এরাপল্লী প্রসন্ন ও আম্পায়ারিংয়ের জন্য খ্যাতি পাওয়া ভেঙ্কটরাঘবন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রিধারী। পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার সাঈদ আনোয়ার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিয়েছিলেন।