সম্রাট হোসেন এমিলি, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুদের সঙ্গে খেলেছেন বশির উদ্দিন রতন। অভাব-অনটনের সংসারে ফুটবলকে পেশা হিসেবে নিতে পারেননি। নিজে না পারলেও সখ করে ছোটভাইকে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়েছিলেন। আর্থিক সংকটে ছোটভাই সুলতান মাহমুদ মাখনও বিকেএসপি’র পাট চুকাতে পারেননি। তখন থেকেই খেলাধূলার প্রতি একটা অনীহা ছিল। এরপর দেখলেন বড় ছেলে রাব্বি বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ট্রায়ালে ভালো করে কোথাও সুযোগ পাচ্ছে না। তখনই ছেলেদের খেলাধুলা না করে পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রায়ই ফুটবল খেলার অপরাধে ছেলেদের মারধর করতেন বশির উদ্দিন। তার এক কথা খেলাধুলা গরিবের জন্য নয়। অভিমান করে সপ্তাহ খানেক আগে ছেলেদের বুট, হুজ গভীর পুকুরে ফেলেও দিয়েছিলেন। সেই বশির উদ্দিন ছেলের কীর্তির সংবাদে অঝোরে কাঁদলেন। মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছিলো না তার। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তার ছেলে গোলাম রাব্বি খান কনফেডারেশন্স কাপ অনূর্ধ্ব-১২ ফুটবল ফেস্টিভ্যালে খেলতে রাশিয়ায় যাচ্ছে।
ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ উপলক্ষে রাশিয়া আয়োজন করতে যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১২ বয়সীদের ফুটবল উৎসব। সেখানে অংশ নেবে বাংলাদেশও। তবে পুরো দল নয়, আগামী ২৬শে জুন থেকে ৩রা জুলাই অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ থেকে শুধু একজন ফুটবলার খেলতে পারবে। সেই ভাগ্যবান ফুটবলার বাছাইয়ের জন্য গত রোববার ট্রায়ালে ডেকেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই ট্রায়ালে ২০০ জন ক্ষুদে ফুটবলার থেকে অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের ড্যানিয়েল করিম, নারায়ণগঞ্জের হাজী আলম চান হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র গোলাম রাব্বি খান ও একই জেলার গোগনগর বঙ্গবন্ধু হাইস্কুলের সম্পদ হাসানকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেন বাফুফে’র টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি। এই তিন ক্ষুদে ফুটবলার থেকে শেষ পর্যন্ত রাব্বিকে বেছে নেন পল।
ফুটবলের মাধ্যমে বন্ধুত্ব ছড়িয়ে দিতেই এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ফিফা। এখানে বিভিন্ন দেশের ফুটবলারদের নিয়ে গড়া হবে একটি দল। বিভিন্ন পজিশনের ফুটবলার নিয়ে ফিফা গড়বে ওই নির্দিষ্ট একাদশ। এভাবে ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে ৬৪ দেশের ফুটবলার। লটারির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে চাওয়া হয়েছে একজন স্ট্রাইকারকে। সেই স্ট্রাইকার হিসেবে যাবেন নারায়ণগঞ্জের এই ক্ষুদে ফুটবলার।
রাশিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ফুটবল-প্রতিভাকে অবশ্যই মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে বাছাই কমিটি। তবে একই সঙ্গে ওই ফুটবলারের ইংরেজিতে কথা বলা ও লিখতে পারাও অতিরিক্ত যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়েছে। তাই রাব্বিকে চূড়ান্ত করে সামনের সময়টুকুতে ইংরেজি শিখতে বলা হয়েছে।
ছেলের এমন সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া রাব্বির বাবা বশির উদ্দিন রতন জানান, আমার চার ছেলের মধ্যে রাব্বি একটু আলাদা। আমি ছেলেদের ফুটবল খেলতে বারণ করেছি বলে ওর ভাইয়েরা ফুটবল খেলা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ও ছাড়েনি। আমাকে না জানিয়ে খোকন স্যারের সঙ্গে ঢাকা ট্রায়ালে গেছে। আমি রাগারাগি করতাম বলে আজও আমাকে বলেনি। অথচ ঢাকা থেকে সবাই আমাকে ফোন করে এখন এই সুসংবাদ দিচ্ছে। সংসারে অভাব-অনটনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সীমিত আয়ের লোক, ওদের পেছনে বাড়তি দশটা টাকা খরচ করতে পারিনি। অথচ আমার ছেলে আমাকে আজ কত বড় একটা সুখবর দিলো। আমি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাবা। আমার বিশ্বাস আমার ছেলে একদিন দেশসেরা ফুটবলার হবে। মেসিকে আদর্শ মানা রাব্বিও দেশের মুখ উজ্জ্বল করার প্রত্যাশা জানিয়েছেন।