টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণের জন্য প্রণোদনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সরকার। প্রতি বছরের মতো এবারো (খরিপ ১/২০১৯-২০) মৌসুমে উফশী আউশ আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গতকাল (২১ মার্চ) নিজ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ সময় কৃষি সচিব নাছিরোজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান সরকার আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি সাধন করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং কৃষির প্রসারে বিভিন্ন ফসলের উদ্ভাবন, উফশী জাত ব্যবহার, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি প্রবর্তন করেছে। আউশ ফসল আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে আবাদের এলাকা বৃদ্ধি ও পতিত জমি আবাদের আওতায় আনা, কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা এবং একই সঙ্গে উচ্চফলনশীল জাতের আউশ ধান আবাদ বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
খরিপ মৌসুমে কৃষক প্রতি সর্বোচ্চ এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদানের প্রণোদনা কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় দেশের ৬৪ জেলায় চার লাখ ৫৮ হাজর ২২৬ জন কৃষককে উফশী আউশ বীজ ও সার বিতরণ করা হবে। এ বাবদ ব্যয় হবে মোট ৪০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার ৭৫০ টাকা। একজন কৃষক এক বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি ধানের বীজ (প্রতিকেজি ৫৮ টাকা হিসেবে ২৯০ টাকা), ১৫ কেজি ডিএপি সার (প্রতি কেজি ২৩ টাকা হিসেবে ৩৪৫ টাকা), ১০ কেজি এমওপি সার (প্রতি কেজি ১৩ টাকা হিসেবে ১৩০ টাকা), পরিবহন ব্যয় ৯০ টাকা এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় ২০ টাকাসহ মোট ৮৭৫ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হবে।’
কৃষিমন্ত্রী জানান, খরিপ-১ মৌসুমে আউশ প্রণোদনা কার্যক্রম সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দানা জাতীয় খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও বরেন্দ্র এলাকায় যেখানে সেচ সুবিধা নেই সেখানে বোরো আবাদ ব্যাহত হয় এবং এই সমস্ত এলাকায় বোরোর পরিবর্তে আউশ আবাদ উৎসাহিত করতে আউশ নির্ভর জেলাসমূহে উচ্চ ফলনশীল আউশের জাত অধিক জনপ্রিয় করতে সরকার এ প্রণোদনা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমানে আউশ মৌসুম সারাদেশে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এরমধ্যে ৬১ হাজার ৩৫৪.০৮১ হেক্টর জমিতে এ প্রণোদনা কার্যক্রমেন মাধ্যমে জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হবে। প্রণোদনার আওতাধীন জমি থেকে চাল উৎপাদন হবে প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন যার মূল্য ৫৭৮ কোটি ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪০ টাকা। খড় উৎপাদন হবে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন যার মূল্য ২৪ কোটি ৬৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৬ টাকা। অর্থাৎ চাল ও খড় উৎপাতন বাবদ মোট আয় হবে ৬০৩ কোটি ৫৪ লাখ ৯৪৫ টাকা।