সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) দেশব্যাপি ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি কার্যক্রম’টিই পাবলিক লাইব্রেরির তত্ত্বাবধানে পরিচালনার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
পাবলিক লাইব্রেরি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ‘দেশব্যাপি ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি প্রকল্প’ শিরোনামে এ প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার এ প্রসঙ্গে জানান, প্রকল্পটি অনুমোদন হলে শিগগিরই এ কার্যক্রম চালু করা হবে। জুলাই, ২০১৭ থেকে জুন, ২০২০ পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদিও প্রকল্পটি শুরুর সময় ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এতে তেমন কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারণ প্রকল্পটি অনুমোদন হলে এ সময়টি এডজাস্ট করে নেয়া যাবে।মহাপরিচালক বলেন, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পাবলিক লাইব্রেরি ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় জেলা প্রকাশক, গণ্যমান্য ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র, লাইব্রেরিয়ান এবং বিশেষ করে বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে।
তিনি বলেন, মতবিনিময় সভাগুলোর প্রতিবেদন এখন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। যা প্রকল্পটি সফল করতে কাজে আসবে।
পাবলিক লাইব্রেরির প্রধান লাইব্রেরিয়ার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির এ কার্যক্রমটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রই তাদের লোকবল, গাড়ি ও বই দিয়ে পরিচালনা করবে, তবে পাবলিক লাইব্রেরি থাকবে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মকে মননশীল ও জ্ঞানতাত্ত্বিক হিসেবে গড়ে তুলতেই পাবলিক লাইব্রেরির এ কার্যক্রমটি নিজেদের তত্ত্ববধানে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে।তিনি আরো বলেন, সরকারের লক্ষ্য দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম ও পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশে ৬৪টি জেলায় এমনকি উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেয়া।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কনসালটেন্ট কামাল হোসেন জানান, তারা ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি কার্যক্রম ১৯ বছর ধরে পরিচালনা করছেন। গত ৩ বছর সরকারী একটি অর্থায়নে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর আগে বিদেশী ফান্ডের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।তিনি বলেন, পাবলিক লাইব্রেরির তত্ত্বাবধানে আগামী ৩ বছর এ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ওই প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন না হলেও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, আশা করছি শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদন হবে এবং পাবলিক লাইব্রেরির তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো।
তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সাতটি আলাদা আকারের ৪৬টি দৃষ্টিনন্দন গাড়ি রয়েছে। সেগুলোতে যথাক্রমে ৪ হাজার, ৬ হাজার, ৮ হাজার, ১১ হাজার ও ১৭ হাজার করে বই থাকে।তবে গাড়ির সংখ্যা আরো ৩০টি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে এ কনসালটেন্ট বলেন, ভ্রাম্যমান প্রতিটি লাইর্রেরি প্রতি সপ্তাহে শহর ও গ্রামের গড়ে ৪০টি এলাকায় গিয়ে আধঘণ্টা থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত সদস্যদের মধ্যে বই দেয়া-নেয়া করে। সপ্তাহের কোন দিন, ক’টার সময়, কোন গাড়ি, কোন এলাকার কোথায় যাবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে।
তিনি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ১৯৯৯ সালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির এ কার্যক্রম প্রথমে চালু করে দেশের চারটি বড় শহর- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে। সে ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সাল থেকে দেশের ৫৮টি জেলার ২৫০টি উপজেলার ১ হাজার ৯০০ লোকালয়ে এ কার্যক্রম এখন পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ এ কার্যক্রম ১৯০০ ছোট লাইব্রেরির কাজ করছে। ভ্রাম্যমান এ লাইব্রেরিগুলোর বর্তমান সদস্যসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার।