চিনিকলগুলো এবার ইথানল উৎপাদন কমিয়ে চিনি উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি গত বছরের চেয়ে চিনি উৎপাদনও বেড়েছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে। দ্বিতীয়বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ডেও ২০১৬-১৭ মৌসুমে চিনি উৎপাদন বেড়ে হয়েছে এক কোটি টন।
অন্যদিকে বড় আমদানিকারক দেশ চীন এবার আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে বড় ধরনের চিনি রপ্তানির সম্ভাবনা কমায় এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। চিনি উৎপাদনে দ্বিতীয়বৃহৎ দেশ ভারত। গত কয়েক বছর খরায় দেশটিতে চিনি উৎপাদন কমলেও এ বছর অনুকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন এক-চতুর্থাংশ বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে শিল্পসংশ্লিষ্টরা। ফলে গত বছর দেশটি আমদানি করলেও এবার আর আমদানি করতে হবে না।
পাশাপাশি উৎপাদন বাড়ছে পাকিস্তান ও ইউরোপীয় দেশগুলোতেও। ফলে এ বছর চিনি উৎপাদন বাড়বে এমন পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাপী দাম কমছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাব অনুযায়ী, গত মে মাসে বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমেছে ২.৩ শতাংশ, এপ্রিলে কমেছে ৯.১ শতাংশ এবং মার্চে কমেছে ১০.৯ শতাংশ। অর্থাৎ টানা তিন মাস চিনির দাম ২২ শতাংশের বেশি কমেছে।
এফএওর মতে, এ দাম ১৩ মাসে সর্বনিম্ন। ব্লুমবার্গ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে চিনির সরবরাহ বাড়ার বিপরীতে কমছে চাহিদা। ফলে এ বছর কাঁচা চিনির দাম কমেছে ১৬ শতাংশ। বিশ্ববাজারে দীর্ঘ মেয়াদে নিম্নমুখী থাকবে এ পণ্যের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি সংস্থা ইউএসডিএ বলছে, বিশ্বে ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যে চিনির ব্যবহার কমছে, ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে কম্পানিগুলো। ফলে গত ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম বিশ্ববাজারে কমতে যাচ্ছে চিনির চাহিদা।
সংস্থা জানায়, নতুন মৌসুমে বিশ্বে চিনির উৎপাদন ৮৮ লাখ টন বেড়ে হবে রেকর্ড ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টন। এর মধ্যে ভারতে উৎপাদন ৩৯ লাখ টন বেড়ে হবে ২ কোটি ৫৮ লাখ টন। চীনে উৎপাদন ১০ লাখ টন বেড়ে হবে ১ কোটি ৫ লাখ টন, যা হবে তিন বছরে সর্বোচ্চ। ইউরোপীয় দেশগুলোতেও চিনি উৎপাদন বাড়বে ২১ লাখ টন। ফলে এ অঞ্চল থেকে এবার চিনি রপ্তানি বাড়বে।
ভারতের চিনি উৎপাদন নিয়ে এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২০১৭-১৮ মৌসুমে ভারতে চিনি উৎপাদন এক-চতুর্থাংশ বাড়বে বলে আশা করছে দেশটির চিনিশিল্পসংশ্লিষ্টরা। গত মৌসুমে দেশটিতে ২৫ মিলিয়ন টন চিনি উৎপাদন হয়। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব কো-অপারেটিভ সুগার ফ্যাক্টরিস লিমিটেডের এমডি প্রকাশ নেইকনাভের বলেন, এবার যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হচ্ছে তা স্থানীয় চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। এ বছর আর আমাদের আমদানির প্রয়োজন হবে না। আমরা আশা করছি, নতুন মৌসুমে মহারাষ্ট্রে ব্যাপক চিনি উৎপাদন হবে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে।
২০১৬-১৭ মৌসুমে উৎপাদন কমায় ৫ লাখ টন চিনি আমদানি করেছিল ভারতের ব্যবসায়ীরা। মূলত এল নিনোর প্রভাবে দেশটিতে মারাত্মক খরায় আখ উৎপাদন কমে যায়। চিনি উৎপাদনে ভারতের দ্বিতীয়বৃহৎ রাজ্য মহারাষ্ট্রে চিনি উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে যায়। ওই বছর এ রাজ্যে চিনি উৎপাদন হয় ৪১ লাখ টন। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সরকার শুল্কমুক্ত চিনি আমদানির সুযোগ দেয়। আশা করা হচ্ছে নতুন মৌসুমে চিনি উৎপাদন ৬২ শতাংশ বেড়ে হবে ৬৮ লাখ টন।