ভর দুপুরের তাপ দিতে শুরু করে দিয়েছে গ্রীষ্ম। কালবৈশাখীর তাণ্ডব, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পাশাপাশি গরমও পড়তে শুরু করেছে। দু’পা হাঁটলেই ঘামতে শুরু করেছেন মানুষজন। ভোরবেলার তাপমাত্রা আর দুপুরবেলার তাপমাত্রার যথেষ্ট ফারাক থাকছে এখন। ঠান্ডা-গরমের এই তারতম্য প্রভাব ফেলে মানবদেহে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাই প্রতিবারের মতো এ বারও সর্দিকাশি, জ্বর এবং পেটের রোগের মতো বিভিন্ন ধরনের অসুখে পড়ছেন মানুষজন। এই সব রোগ সে অর্থে প্রাণঘাতী বা অতি-বিপজ্জনক না হলেও সচেতনতার অভাব আর প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন না করার ফলে অনেক সময় তা গুরুতর আকার নেয় এবং সার্বিক ভাবে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় তিনটি অসুখ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকেন পক্স, পেটের সংক্রমণ এবং সাধারণ ঠান্ডা লাগা কমন কোল্ড। তাই ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে, গ্রীষ্মকালে নানা ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার এবং প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকাও যথোপযুক্ত হওয়া উচিত। এই সব রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে কী কী ধরনের সাবধানতা নেওয়া উচিত এবং কী কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, সে সব নিয়েই আজ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ স্বাস্থ্য-কথায়।
চিকেন পক্স: চিকেন পক্স এক ধরনের ভাইরাস-ঘটিত রোগ। এই রোগ প্রাণঘাতী নয়। সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই চিকেন পক্সের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, প্রতিরোধ করা যায়। প্রথমত, কারও যদি চিকেন পক্স হয়, তবে তাঁর ঘরের বাইরে বার হওয়া একদম বারণ। স্কুল-কলেজ বা অফিস যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। চিকেন পক্স যেহেতু একটা ছোঁয়াচে রোগ, তাই চিকেন পক্সে আক্রান্ত কারও সঙ্গে মেলামেশা করা ঠিক নয়। আক্রান্তের সঙ্গে মেলামেশা করলে দ্রুত এই রোগ সবার মধ্যে ছড়িয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, চিকেন পক্সে আক্রান্ত রোগীর উচিত চুপচাপ ঘরে থেকে টানা বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র খেতে হবে। এই সব সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং ঠিকঠাক ভাবে নিয়ম মেনে চললে নির্দিষ্ট সময় পরে চিকেন পক্স থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা ‘কমন কোল্ড’ : গরম পড়া শুরু হলেই দেখা যায় যে, অনেক মানুষ সর্দিকাশির সমস্যায় ভুগতে শুরু করছেন এবং জ্বরে পড়ছেন। এই উপসর্গকেই ‘কমন কোল্ড’ বা সাধারণ ঠান্ডা লাগা বলা হয়ে থাকে।
একটু গরম পড়লেই অনেকেই ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাওয়া শুরু করে দেন। গরম থেকে এসে হঠাৎ ঠান্ডা জল খাওয়া একেবারেই ঠিক কাজ নয়। তাতে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে এবং তা থেকে কমন কোল্ড হয়। এ ছাড়া, এখন দিনের বেলা এবং ভোরবেলার তাপমাত্রার বেশ পার্থক্য রয়েছে। দিনের বেলা গরম পড়লেও ভোরের দিকে একটু ঠান্ডা ভাব থাকে। এই ঠান্ডা-গরমের ফারাকের কারণে কমন কোল্ড হতে পারে। সেই কারণে ভোরের দিকে ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাব অনুভব করলে সুতির মোটা জামা পড়া উচিত, যাতে কোনও ভাবে ঠান্ডা না লেগে যায়। এইটুকু সামান্য সাবধানতা অবলম্বন করলেই কমন কোল্ডের হাত থেকে, ঠান্ডা লাগার হাত থেকে, সর্দিকাশি-জ্বরের হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।
পেটের সংক্রমণ: তামমাত্রার ফারাক এবং গরমের কারণে ঋতু পরিবর্তনের সময় এমনিতেই মানুষের হজমের একটু সমস্যা হয়। এ ছাড়া, খাদ্যাভ্যাস একটা বড় বিষয়। গরমের এই সময়ে অত্যধিক মশলাযুক্ত খাবার খেলে পেটের সংক্রমণ হতে বাধ্য। ইতিমধ্যেই এই অসুখে তাই বহু মানুষ আক্রান্তও হচ্ছেন। এ সময়ে খাবার নিয়ে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যা খুশি তাই খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাতে পেটের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
প্রথমত, গরমের মৌসুমে অত্যধিক মশলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার। এই সময় মাছের পাতলা ঝোল, ডাল, ভাত, রুটি এবং হাল্কা-মশলার তরিতরকারি পরিমাণ মতো খেতে হবে। রেড মিট এবং তেল ও মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া দরকার। গরমের সময় ফলের রস খাওয়াও খুব প্রয়োজন। গরমের দিনে এই কয়েকটা বিষয় মাথায় রেখে খাওয়াদাওয়া করলে এইসব অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।