আমাদের খাদ্য তালিকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হল ডাঁটা। প্রধানত শীতের শেষের কয়েক মাস ধরে নানা ধরনের তরকারিতে সজনে ডাঁটা ব্যবহার করা হয়।
সজনে গাছে অধিকাংশ জায়গায় কোনও প্রকারের ‘কীটনাশক’ ব্যবহার করা হয় না। ফলে অন্য সবজির ক্ষেত্রে যেখানে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ফসলে থেকে যায় এবং খাবারের মাধ্যমে মানব দেহে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে এই সজনে ডাঁটা সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত। তারই সঙ্গে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, শ্বেতসার বা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ লবণের মতো সুষম খাদ্য উপাদানগুলি সজনে ডাঁটায় পুরোমাত্রায় উপস্থিত থাকে। ডাঁটা ছাড়াও সজনে গাছের ফুল, বীজ, ছাল, আঠা, তেল প্রভৃতি অংশগুলিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে ডাঁটায় ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৫.৩ মিলিগ্রাম আয়রন, ১.৮ মিলিগ্রাম কপার থাকে। সজনে গাছের পাতার ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম পাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৭০ মিলিগ্রাম আয়রন এবং সাত মিলিগ্রাম কপার থাকে।
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, সজনে গাছের পাতা ও বীজ আটটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড-সহ প্রচুর পরিমাণ প্রোটিনের ধারক। সজনে ডাঁটার দ্রাব্য ও অদ্রাব্য ফাইবার ইরিটেবল বাওয়েল রোগে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা নেয় বলে মনে করেন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, গোটা বিশ্বে যে সব গাছে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রোটিন রয়েছে তাদের তালিকার এক দম উপরের দিকেই সজনেকে রাখা হয়ে থাকে। সজনে পাতায় থাকা ক্যালসিয়াম বহু ক্ষেত্রে জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
পাতা এবং ডাঁটার পাশাপাশি সজনে গাছের শিকড়, কাণ্ড, গাছের ছাল, আঠা, পাতা পরিণত ফুল, পরিণত বীজ, বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল প্রভৃতিতে ডিম্যানোজ, ডি-গ্লুকোজ, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, বিটা সিস্টোটেরল, বিটা ক্যারোটিন, ভ্যালনিনের মতো নানা ফাইটো কেমিক্যাল থাকে। রোগ নিয়ন্ত্রণে এদের ভূমিকা অপরিসীম। সজনের পাতায় থাকা খাদ্য উপাদানগুলি মাথা ব্যথা, টিউমার, কৃমি, চোখ ও কানের যন্ত্রণা, ব্রঙ্কাইটিস, স্কার্ভি ইত্যাদি রোগ সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। সজনে ফুলের উপাদানগুলি টিউমার ও প্লীহার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। আবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সজনে গাছের মূল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।