ডিএমপি নিউজ: গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ।
গতকাল বুধবার বিকেলে কদমতলী থানার গিরিধারা আবাসিক এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোঃ নজরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ বাহাদুর মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে পিতলের থালা, গামলা, ঘটি, আগরদানী, তাবিজ লেখার বই ও ২৯টি তাবিজের খোল উদ্ধার করা হয়।
সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার এস.এম হাসান সিদ্দিকী ডিএমপি নিউজকে বলেন, গত সোমবার ভিকটিম নুরুল আমিন পলাশ গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রতারণা সংক্রান্তে একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, ভিকটিম নুরুল আমিন পলাশ গত বছর আগস্ট মাসে তার ছোট বোনের ছেলেকে জ্বীনের আছর ছাড়াতে কবিরাজ আঃ জলিলের দারস্থ হন। জলিল বলেন তাকে বড় জ্বিনে আছর করেছে, এরপর তাদেরকে বড় জ্বীনের কবিরাজ নজরুলের মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়। জলিল বলেন এ কবিরাজ মাটির নিচের গুপ্তধনের সন্ধানও দিতে পারে। এরপর একদিন নজরুল ও তার সহযোগী বাহাদুর পলাশের বোনের বাসা দিয়াবাড়িতে যায়। সেখানে পলাশের ভাগিনাকে ঝাড়-ফুঁকের এক পর্যায়ে বাহাদুর নাক-মুখ দিয়ে কৌশলে রক্ত বের করে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যা ভিকটিমের মনে বিশ্বাস জন্মায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরো জানায়, কবিরাজ নজরুল ভিকটিম পলাশকে বলে তার সাথে একজন জ্বীনপরী আছে। যার মাধ্যমে সে পলাশের বাড়িতে থাকা মাটির নিচের পুরোনো গুপ্তধন উঠিয়ে দিতে পারবে। তাদের কথামতো পলাশ বরিশালের কাঁঠালিয়া থানায় তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা দেন। কিছুক্ষণ পর নজরুল জানায়, পলাশের বাড়ির উত্তর পাশে মাটির নিচে একটি গুপ্তধনের ঘটি আছে। ঘটিটি জ্বীনেরা পাহারা দিয়ে রাখছে। গুপ্তধন উঠাতে হলে পাহারারত ৩০/৪০ জন জ্বীন মারা যাবে। মারা যাওয়া প্রতি জ্বীনের সাদকা হিসেবে গরু দিতে হবে। ঐ বছর সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ রাত ১১টায় নজরুল ও বাহাদুর ভিকটিম পলাশের ঘরের পাশে হতে মাটি খুঁড়ে কথিত গুপ্তধনের ঘটি এনে আলমারীতে রাখে। এরপর জ্বীনদের গরু সাদকা বাবদ ও গুপ্তধন ভর্তি ঘটির লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পলাশের কাছ থেকে ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সহজ সরল মানুষকে জ্বীন-পরীর বাদশা পরিচয় দিয়ে কৌশলে অলৌকিক ক্ষমতার কারিশমা দেখিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিতো।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ওয়ারী থানায় মামলা রুজু হয়েছে। পলাতক মোঃ আঃ জলিল ও মোঃ মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে মর্মে জানান গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা।