ডিএমপি নিউজ: হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে শত বঞ্চনা, নিপীড়ন, নিষ্পেষণ ও বৈষম্যের জাল ছিন্ন করে ১৯৭১ সালে। বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে । স্বাধীনতা এনে দিয়েই জাতির পিতা ক্ষান্ত হননি, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তুলতে গ্রহণ করেন নানা পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের পুলিশ সপ্তাহে জাতির পিতা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন রাজধানী ঢাকার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠার।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকেরা রচিত করে বিশ্ব ইতিহাসের এক বর্বরতম ও কলঙ্কজনক অধ্যায়, রুখে দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে যা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হতো, পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে ৬,০০০ পুলিশ ও ১২টি থানা নিয়ে রাজধানী ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার গুরুদায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গত ১ ফেব্রুয়ারি গৌরবময় সেবার ৪৮ বছরে পদার্পণ করেছে। শান্তি শপথে বলীয়ান ডিএমপি পেশাগত দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও জনঅংশীদারীত্বকে কর্মকৌশল হিসেবে গ্রহণ করে জনবহুল এবং ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকা মহানগরীর আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করার মাধ্যমে জননিরাপত্তা বিধান করে আসছে। কালের পরিক্রমায় ডিএমপি’র কলেবর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার একজন কমিশনার এর নেতৃত্বে পরিচালিত ডিএমপি’র কার্যক্রম বর্তমানে ৫০টি থানায় বিস্তৃত। পুলিশ কমিশনারের অধীনে কাজ করছেন ০৬ জন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি), ১২ জন যুগ্ম-কমিশনার (অতিঃ ডিআইজি), ৫৯ জন উপ-পুলিশ কমিশনার (এসপি), ১৪৬ জন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিঃ এসপি), ১৪৪ জন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি), ৬৯০ জন ইন্সপেক্টর, ২৭২৬ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ৭০৩ জন সার্জেন্ট, ৩৯৭৩ জন এ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, ১১৯২ জন নায়েক, ২০৪৬৩ জন কনস্টবল এবং ৭৪৩ জন সিভিল স্টাফ। উল্লেখিত জনবলের মধ্যে ০১ জন যুগ্ম কমিশনার, ০৫ জন উপ-পুলিশ কমিশনার, ১১ জন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এবং ১৬ জন সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ১৮৯৪ জন নারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। আর সেই টেকসই ব্যবস্থার জন্য পুলিশিং কার্যক্রমে জনগণের সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততা আবশ্যক। পুলিশ ও জনতার অংশীদারীত্বের মধ্য দিয়ে সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসন করা ডিএমপি’র অন্যতম কৌশল। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক যোগাযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ জনতার দূরত্ব হ্রাস করার জন্য বিদ্যমান বিট পুলিশিং ব্যবস্থা ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ মহোদয়ের নির্দেশনায় আরো জোরদার করা হয়েছে। ‘বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’ স্লোগানকে সামনে রেখে ডিএমপি’র ৩০৬ বিটে দায়িত্ব প্রাপ্ত বিট অফিসারগণ অপরাধ দমনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করছেন। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অপরাধভীতি দূর করা এবং জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে পুলিশভীতি দূর করার লক্ষ্যে কাজ করছে বিট পুলিশিং ব্যবস্থা। বিট পুলিশিং এর আওতায় ঢাকা মহানগরীর বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া তথা বসবাসরত সকল নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে Citizen Information Management System (CIMS) নামক সফটওয়্যারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ৮৮,০৩,৩৩৮ জন নাগরিকের তথ্য এ সফটওয়্যারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এতে করে অপরাধ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সহজতর হয়েছে। ২০২২ সালের জনসম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে ৩১,৬০৪টি উঠান বৈঠক সম্পন্ন করা হয়েছে।
বিশ্বায়নের এ যুগে সহজলভ্য প্রযুক্তি অপরাধকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দ্রুত বিস্তৃত করছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধ উদঘাটনে পুলিশের উন্নত প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। সাইবার স্পেসে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ ও সংঘটিত অপরাধ তদন্তের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং অপরাধীকে অনুসরণ করা ও অপরাধজনক ডাটা কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ডিএমপি’র ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চে গঠন করা হয়েছে সাইবার ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। অপরাধ দমন ও প্রতিরোধের জন্য সন্দেহভাজন এবং গ্রেফতারকৃত অপরাধীর যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি মাত্র ক্লিকে প্রাপ্তির নিমিত্তে DMP Renovated Information Managment System (DRIMS) নামে ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্লাটফর্ম চালু করা হচ্ছে। ডিএমপি’র বিদ্যমান Suspect Identification and Verification System (SIVS) বহুমুখী ব্যবহারের নিমিত্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজন করে (SIVS ++) চালু করা হয়েছে। এ সিস্টেমে অদ্যাবধি ৭৮,৪৭১ জন সম্পত্তি সংক্রান্ত এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধীর ছবিসহ তথ্য সংরক্ষিত করা হয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ পালন করেছে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ। ১৭ থেকে ২৭ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বর্ণিল আনন্দ উদ্যাপনকে আরও ঋদ্ধ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র মালদ্বীপ ও নেপালের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং শ্রীলংকা, ভুটান ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। নগরবাসীর জীবনাচরণকে স্বাভাবিক রেখেই অতিথি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রদান ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। রাজারবাগ অডিটোরিয়ামে নিরাপত্তা ব্রিফিং-এ মাননীয় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) মহোদয় তাঁর সুদৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপর। সম্মানিত ডিএমপি কমিশনার জনাব মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার) মহোদয়ের নেতৃত্বে সে পরীক্ষায় ফুল মার্কস্ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের বৃহত্তম এই ইউনিট। পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণের ১১ দিনের বিভিন্ন কর্মসূচি কেন্দ্রিক নিরাপত্তায় ডিএমপির ২০,৮৪৮ জন অফিসার ও ফোর্স সরাসরি দায়িত্ব পালন করেন। ১৬-১৮ ডিসেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ করে বাংলাদেশ সফর করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার অকৃত্রিম বন্ধুদেশ ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গত পাঁচ বছরের মামলার পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায় বছরে গড়ে প্রায় ২৫,০০০ মামলা রুজু হয়ে থাকে। করোনা অতিমারীর সময় মামলা কিছুটা কম রুজু হলেও এখন মামলা রুজুর হার বাড়ছে। ২০২১ সালে ২৭,৪৬১টি মামলা রেকর্ড হয়, গত বছর ২০২২ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮৭৪৯টি। এ সকল মামলার সিংহভাগ থানায় নিযুক্ত কর্মকর্তাগণ তদন্ত করে থাকেন। বিশেষ কিছু জটিল, স্পর্শকাতর, চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্ত করছেন ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের কর্মকর্তাগণ। সন্ত্রাস দমন আইনে কিংবা সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট মামলা তদন্ত করেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট এর কর্মকর্তাগণ। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে রুজুকৃত মামলার অধিকাংশ তদন্ত সম্পন্ন করছেন উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের নারী কর্মকর্তাগণ। ২০২২ সালে রুজুকৃত ১৭৩টি খুন মামলার মধ্যে ১৪৬টি মামলার, ২৭টি ডাকাতি মামলার মধ্যে ২১টি মামলার, ১৪৫টি দস্যুতা মামলার ক্ষেত্রে ১২৭টি মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ অল্প সময়েই চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটনে ডিএমপির সফলতার হার ৮৫ শতাংশেরও বেশি,। অপরাপর মামলার তদন্তেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান কিশোর অপরাধের ঘটনা নিয়ে ডিএমপি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সংঘটিত ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কিশোর অপরাধ ঘটনা প্রতিরোধে থানার কর্মকর্তাগণ ক্রমাগতভাবে উঠান বৈঠকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) ইউনিট ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সন্ত্রাস বিরোধী একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। গত ৫ বছরে সিটিটিসি ২৩টি হাইরিস্ক অপারেশন পরিচালনা করে যাতে ৬৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি ২০১টি মামলায় ৫৩১ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়। ১১০টি মামলায় ২২৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত “বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় প্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে সিটিটিসি। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ পর্যন্ত ১৯৬টি আলোচনা সভা, কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সিটিটিসি কর্তৃক প্রতিটি থানার একজন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মামলা তদন্তে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিস এর সহযোগিতায় খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক ২৬টি গবেষণাকর্মের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
ডিএমপির ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) গুরুত্বপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর এবং ক্লুলেস মামলার তদন্তে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে আসছে। মামলা তদন্তের পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, জালিয়াত চক্র, পেশাদার অপরাধী গ্রেফতারে ডিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। ডিবির নিরলস প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষা অফিস, জ¦ালানি অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত এবং অর্থের বিনিময়ে চাকরি প্রদানের নামে অর্থ সংগ্রহকারী চক্রকে সনাক্ত করে এবং গ্রেফতার করে। ডিবির অভিযানের প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে। এছাড়াও অনলাইন ভিত্তিক জুয়া খেলার সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন ই-কমার্স বাণিজ্যে প্রতারণার দায়ে ব্যাপক সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করেছে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ।
সীমিত সড়ক এবং নানা ধরনের মেগা প্রজক্ট বাস্তবায়নের কারণে যান চলাচলের রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে ডিএমপি’র ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখা বড় ধরণের এক চ্যালেঞ্জিং কাজ। এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা নগরীর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সম্পূর্ণ নারী কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত ডিএমপি’র উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। ২০০৯ সালে ডিএমপি’র অধীনে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। কাজের ব্যাপকতা এবং নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্থাপন করা হয় উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এ বিভাগের সাথে ১০টি বেসরকারি সংস্থা সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ বিভাগের রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট (www.dmpwsid.gov.bd) এবং হটলাইন (০১৩২০০৪২০৫৫), যার মাধ্যমে নির্যাতিত যে কোন নারী পুলিশি সহায়তা পেতে পারেন। ডিএমপি’র প্রটেকশন বিভাগ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের সাথে সমন্বয় করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার ঘোষিত বিদেশী ভিভিআইপিগণের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া মন্ত্রীবর্গ, বিদেশী ডেলিগেট এবং কেপিআই সমূহের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বও এ বিভাগের উপর ন্যস্ত। ২০২১ সালে মাহামান্য রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৩টি নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬৬টি নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে প্রটেকশন বিভাগ। ঢাকায় অবস্থিত বিদেশী হাইকমিশন ও দূতাবাস এবং কূটনৈতিকদের নিরাপত্তায় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে ডিএমপি’র ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশন।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেকোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা উদঘাটন, ভিভিআইপি গমনাগমনের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণ, সড়কে সংঘটিত যে কোন ধরণের অপরাধ, অরাজকতা, সহিংসতা প্রতিরোধ সর্বোপরি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২১ সালে ডিএমপি’র উদ্যোগে নগরীর ১৯৪টি গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ৬২৫টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আরো ৫০০টি ক্যামেরা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়া ল এন্ড অর্ডার অর্ডিনেশন কমিটি (LOCC) এর আওতায় গুলশান, বনানী এলাকাসহ নগরীতে স্থাপন করা হয়েছে আরো ১২০০টি ক্যামেরা।
ডিএমপির ওয়েলফেয়ার এন্ড ফোর্স বিভাগ এবং পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ফোর্স ব্যবস্থাপনা, ফোর্সের শৃঙ্খলা রক্ষা, ফোর্সের কল্যাণ এবং শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। সরকারি দায়িত্ব পালনে সদা ব্যস্ততার মধ্যেও ডিএমপির পুলিশ সদস্যগণ খেলাধুলায় সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ পুলিশ চ্যাম্পিয়নশিপের ২৮টি ইভেন্টের ২৩টিতে ডিএমপি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
পুলিশের কার্যক্রমে থানা প্রধান সার্ভিস ডেলিভারি সেন্টার হিসেবে পরিচিত। থানায় সেবার মান উন্নয়নে থানায় সেবা গ্রহণে আসা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে সেবার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। ২০২১ সালে ৭৯৯৬টি মামলায় বাদী এবং ৫৮,০১১ জন জিডি রুজুকারী ব্যক্তির সাথে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ ফোনে কথা বলেছেন। বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস। অনলাইনে আবেদন করে ঘরে বসেই এ সেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। ডিএমপি’র এ সেবার মান নিয়ে মিডিয়াতে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২১ সালে ২৩,৬৬৯ জনকে এ সেবা প্রদান করা হয়ে। ডিএমপি’র গবেষণায় দেখা যায় ৯৮.৯৯ ভাগ সেবাগ্রহীতা পুলিশের এ কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি বাস্তবায়নে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ডিএমপি যেমন বদ্ধপরিকর, তেমনি ডিএমপি’র সদস্যদের মাদকমুক্ত রাখার জন্য ডিএমপি গ্রহণ করেছে নজিরবিহীন ব্যবস্থা। গৃহীত এ ব্যবস্থার আওতায় ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় অনেক পুলিশ সদস্যকে ইতোমধ্যে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ডিএমপিতে কর্মরত অধ:স্তন পুলিশ সদস্য, সিভিল স্টাফ ও তাদের পরিবারের চিকিৎসার্থে ডিএমপি কল্যাণ তহবিল ও ট্রাফিক কল্যাণ তহবিল থেকে নিয়মিত অর্থ সাহায্য করা হয়ে থাকে। ২০২২ সালে এবাবদ ২.১৬ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। ডিএমপির সদস্যদের সন্তানদের পড়ালেখায় উৎসাহ প্রদানের জন্য চালু আছে ডিএমপি শিক্ষাবৃত্তি। গত বছর কৃতি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১.০৮ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি, উচ্চশিক্ষা বৃত্তি ও শিক্ষা সহায়তা বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা, বিভ্রান্তি ও গুজবের অবসান ঘটিয়ে জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি ও জনমত গঠনে ভূমিকা রাখছে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের আওতায় প্রকাশিত ডিএমপি নিউজ পোর্টাল www.dmpnews.org। গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষের অধিক পাঠকের পদচারণা ঘটে এ নিউজ পোর্টালে। তাছাড়া ডিএমপি’র ভেরিফাইড ফেসবুকে ৭,১১,০০০ জন ফলোয়ার রয়েছেন।
পেশাগত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে উত্তরোত্তর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জনগণের অকুণ্ঠ সহযোগিতা, সমর্থন ও শুভেচ্ছা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বহুমাত্রিক সংগঠন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হয়ে উঠবে জনআস্থার কেন্দ্রবিন্দু, এ প্রত্যাশা আমাদের। ‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে ডিএমপি’র পথচলায় মহানগরীর প্রত্যেক নাগরিকের সহাযোগিতা কামনা করছি।
লেখক:
মীর রেজাউল আলম বিপিএম (বার)
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত)
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ