জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের আলোচনা সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, গ্রন্থাগার সমাজ উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা, মনন, ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালনপালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় ‘জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়’।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট যে শিক্ষা তা হল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সফলতার সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হল গ্রন্থাগার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হৃৎপিন্ড বলা হয়। গ্রন্থাগারে যত বেশি বই পড়বে ততবেশি ভাল মানুষ তৈরি হবে, আলোকিত মানুষ তৈরী হবে। আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে গ্রন্থাগার বাতিঘর হিসেবে কাজ করে।
বুধবার রাজধানীর গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২০’ উপলক্ষে র্যালি শেষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কৃষিমন্ত্রী সভায় এসব কথা বলেন।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ সকাল ৮.৩০ টায় র্যালির উদ্বোধন করেন। পরে র্যালিটি ঢাকা বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শহীদ মিনার ও বাংলা একাডেমি হয়ে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর চত্বরে এসে শেষ হয়। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘‘পড়ব বই, গড়ব দেশ; বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’’।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে যে স্বীকৃতি পেয়েছে সেটি একটি নেতৃত্বের কারণে। সেই নেতৃত্বের গুণাবলি শুধু রাজনীতিতে নয়। নেতৃত্বে গুণাবলি শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নাটক, খেলাধুলা ইত্যাদি ক্ষেত্র থেকে আসে। এই নেতৃত্ব যদি জ্ঞান সমৃদ্ধ না হয়, দূরদর্শীতা, সততা এবং দেশপ্রেম না থাকে, যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা না থাকে তবে তা দিয়ে কোনো কাজে আসবে না। তাই জ্ঞান অর্জনের মধ্যদিয়ে সত্যিকারের মানুষ হতে হবে।
বই পড়লে মন সজীব ও আলোকিত হয়। এর ফলে কঠিন জিনিসকেও হাসতে হাসতে মনের ভেতর নেয়া যায়। প্রাচীন যুগ থেকে এ দেশে লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর সকল দেশেই গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। আলোকিত মানুষ গড়তে গ্রন্থাগারের বিরাট অবদান রয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক সবার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে বইপড়া ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আলোকিত দেশে রূপান্তর করতে পারে। সভ্যতার আদি থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত হাজার হাজার বছর ধরে কালের প্রবহমান ধারায় মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের বিচিত্র ও সমৃদ্ধি গতিপথে বহু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মানুষের পাঠ-চাহিদা মিটানোর জন্য বিচিত্র উপাদান সংগ্রহ, সংগঠন ও সংরক্ষণের এ মহান কাজটি সম্পাদন করার তাগিদেই প্রয়োজন হয়েছে গ্রন্থাগারের। সারা বিশ্বের মনীষীদের চিন্তার সঙ্গে মহামিলনের পবিত্র স্থান গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, ‘বই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে। এটাই হলো মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ। একটি লাইব্রেরি পারে মানুষকে পাল্টে দিতে। তেমনিভাবে একজন পরিবর্তনশীল মানুষও পারে পুরো জাতিকে পরিবর্তন করে দিতে। বই হচ্ছে সেটাই, যা একজন মানুষকে তার নিজ অবস্থান থেকেও অনেক বেশি বড় করে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানুষের বুদ্ধি ও মননের অনুশীলনের প্রয়োজনে মানুষ জ্ঞান আহরণ করে। এই জ্ঞান আহরণের দুটো উপায়। একটি দেশভ্রমণ, অন্যটি গ্রন্থপাঠ। দেশভ্রমণ ব্যয়সাপেক্ষ তাই সবার জন্য সম্ভব নয়। সে তুলনায় জ্ঞান আহরণের জন্য গ্রন্থপাঠ প্রকৃষ্টতম উপায়। কিন্তু জ্ঞানভান্ডারের বিচিত্র সমারোহ একজীবনে সংগ্রহ করা ও পাঠ করা সম্ভব হয় না। এই অসাধ্য সাধন কিছুটা হলেও সম্ভব হয় গ্রন্থাগারের মাধ্যমে। সরকার ইতোমধ্যে ৭৬ঠি ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি,৭১টি স্থানে নতুনকওে গ্রন্থাগার স্থাপন এবং পর্যায়ক্রমে সবউপজেলায় গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে এই বছর ১শ টির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এবছর ৮শ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারের জন্য অনুদান দিয়েছে সরকার পর্যায়ক্রমে এর সংখ্যা ১হাজারটি করা হবে। শিশুদেও বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে বছর ব্যাপী রোড মার্চ করা হবে।
উল্লেখ্য, গ্রন্থমেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করাই জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের লক্ষ্য। জাতীয় পর্যায়ে গত বছরের মতো এ বছরও শাহবাগে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপরে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো দিবস উদযাপন করা হয়। এবার এর ৩য় আসর।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ: মান্নান ইলিয়াস এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানের মূল বক্তা সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।