হাতের ছোঁয়া ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপত্তা দেয়া যাবে বাসাবাড়ি, অফিস বা ব্যাংকে। ভয়েস বার্তা অর্থাৎ কথার সাহায্যেই দরজা খোলা বা বন্ধ, ফ্যান, লাইট, এসিসহ সব ইলেকট্রনিক সিস্টেম চালু ও বন্ধ হবে।
এছাড়া গ্যাস বিস্ফোরণ, ভূমিকম্প ও অগ্নিসংযোগে বাড়ির মালিকের কাছে এবং ফায়ার স্টেশনে ক্ষুদে বার্তা পৌঁছে যাবে। সেই সঙ্গে প্রতিবেশীদের সচেতন করতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইরেন বাজতে শুরু করবে।
এমনি একটি স্মার্ট ইন্টেলিজেন্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেম উদ্ভাবন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নিয়াজ মুস্তাফিজ।
দীর্ঘ দুই বছর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালিদ হোসেন জুয়েল এবং অধ্যাপক খলিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এ উদ্ভাবন করেন তিনি।
রোববার বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসিসিতে অবস্থিত প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাড়ির ডেমো উপস্থাপনসহ এর কার্যকারিতা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, আধুনিক সিকিউরিটি ও সব সুযোগ সুবিধার সমন্বয়ে স্মার্ট ইন্টেলিজেন্ট হোমের বাউন্ডারি গেটে একটি কি প্যাড লক আছে। পাসওয়ার্ড দিয়ে আগন্তুককে বাউন্ডারির ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।
এছাড়া বাড়ির গেটে পৌঁছানোর সঙ্গে অটোমেটিক অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডিং চালু হবে, যা ঘরের মধ্য বসে বাড়ির মালিক দেখতে পাবেন। বাড়ির মেইন ফটকে ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর লাগানো আছে। বাড়ির মালিক ঘরের ভেতরে বসেও মোবাইল অ্যাপসে অডিও বার্তার মাধ্যমে দরজা খুলতে বা বন্ধ করতে পারবেন।
পূর্ব কমান্ড অনুযায়ী প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বাউন্ডারি লাইট অটোমেটিক চালু এবং নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ হবে, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করবে বলে জানান ওই শিক্ষার্থী।
পাশাপাশি ঘরের মধ্যে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে রুমের লাইট ও ফ্যান অটোমেটিক চালু হবে এবং বের হয়ে গেলে একইভাবে বন্ধ হবে। বাড়িতে কতজন অবস্থান করছে তা হিউম্যান কাউন্টারে দেখা যাবে। বেডরুমের সকল ইলেকট্রিক ডিভাইস মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে চালু এবং বন্ধ করা যাবে।
রান্নাঘরের সিকিউরিটি হিসেবে ফ্লাম, গ্যাস এবং ধোয়া সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। সেন্সর আগুন ডিটেক্ট করলে ফায়ার সার্ভিসকে বাড়ির ঠিকানাসহ মেসেজ দেবে। গ্যাস ডিটেক্ট করলে বাড়ির মালিকে অডিও কল এবং ধোয়া সেন্সর করলে মালিকের ফোনে মেসেজ চলে যাবে।
বাড়িতে আরও সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে যা ভূমিকম্প সংকেত এবং তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি হলে নিজেই নির্দিষ্ট ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে দিবে। বাড়ির ছাদে একটি সেন্সর লাগানো আছে।
বৃষ্টি হলে এই সেন্সরের মাধ্যমে বাড়ির জানালা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়ির মধ্য ইমারজেন্সি কলিং বেল ব্যাবহার করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের ডাকা যাবে।
এছাড়া দূর থেকে বাড়ির ডিভাইস কন্ট্রোল করার জন্য জিএসএম মডিউল ব্যাবহার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে বাড়ির মালিক হিটার, ফ্যান, এসি, লাইট অন-অফ করতে পারবে। মেসেজের মাধ্যমে তা মালিককে নিশ্চিত করবে জিএসএম মডিউল। বাড়ির সুবিধার জন্য আরও অনেক ছোট ছোট সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান নিয়াজ মুস্তাফিজ।
নিয়াজ মুস্তাকিম বলেন, দীর্ঘ ২ বছর কাজ করে এই সিকিউরিটি সিস্টিম হোম উদ্ভাবন করেছি। মাস্টার্সে এটাই আমি প্রজেক্ট হিসেবে সাবমিট করেছি। এই সিস্টেম যেকোনো বাড়ি বা অফিসে ব্যবহার করলে তার কক্ষটি সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারবে। আশা করছি দেশে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলবে।
প্রজেক্ট তত্ত্বাবধায়ক ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. খালিদ হোসেন জুয়েল বলেন, আমরা চেয়েছি নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে। এর ৩০ শতাংশ আমাদের আগে ব্যবহার করা হলেও ৭০ শতাংশ আমরাই প্রথম ব্যবহার করেছি। আমারা নরতুর উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে প্রজেক্টটি আই.ই.ই.ই-তে পাঠাবো। আশা করছি আমরা স্বীকৃতিও পাবো।