যতই ঝড়-জল হোক বা যাতায়াত এই সেতুর ঘাস কিন্তু ছিঁড়বে না৷ তৈরির দিন থেকে প্রায় এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে সেটা দুর্বল হতে শুরু করে৷ তখনই নতুন করে অভিনব উপায়ে ফের সেতু নির্মাণে নেমে পড়েন ইনকারা৷ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন যোদ্ধা জাতির এই অদ্ভুত কৌশল তাক লাগিয়ে দেয়৷ অতি দুর্গম স্থানে খরস্রোতা নদীর উপরে তাঁদের অসাধারণ প্রযুক্তি নিয়ে চলছে চর্চা৷
বিবিসি জানাচ্ছে, পেরুর কুজকো রাজ্যের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে আপুরিমাক নদী। এই নদীর অববাহিকায় বাস করছেন ইনকা সভ্যতার উত্তরসূরিরা। নদীর ওপরে চলাচলের জন্য তারা যে সেতু ব্যবহার করেন সেটা তৈরি হয় ঘাস দিয়ে। শতাব্দীর পর শতাব্দী চলেছে একই স্থানে তৈরি হয়েছে নিত্যনতুন ঘাসের সেতু৷ প্রতিবারই পুরনো সেতু কেটে সেই ঘাস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়৷ এটাই নাকি রীতি৷ ইনকা সভ্যতা মনে করে প্রকৃতির দান প্রকৃতিতেই চলে যাওয়া দরকার৷
তেমনই একটি অদ্ভুত ঘাস সেতু রয়েছে কিউএসওয়াচাকা-তে৷ কোয়া ইচু নামের বিশেষ ধরণের শক্ত ঘাস দিয়ে তৈরি হয় এই সেতু। প্রতিটি দড়ি বোনা হয় হাত দিয়ে। তার আগে প্রতিটি ঘাস পাথর দিয়ে পিটিয়ে সমান করা হয়। তারপর জলে ভিজিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। যেন সেতুটি নমনীয় থাকে। এই দুর্গম এলাকায় একই স্থানে ৬০০ বছর ধরে রয়েছে কোয়া ইচু ঘাসের সেতু ৷ স্থান না পাল্টালেও তার ঘাস কিন্তু প্রতিবছর পালটে দেওয়া হয়৷ ২০১৩ সালে এই সেতুটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ইনকা সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ হিসেবে কাজ করত এই সব সেতু। খুবই ঝুঁকিবহুল উপায়ে এর উপর দিয়ে খরস্রোতা নদী পার হওয়া সম্ভব৷
বিবিসি জানাচ্ছে, ইনকা প্রথা অনুযায়ী এই সেতু নির্মাণে যুক্ত থাকতে পারেন শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা। তবে মহিলারা পাহাড়ের ওপর বসে ছোট ছোট দড়ি বোনার কাজ করেন। নতুন সেতু বসানোর আগে পুরুষরা পুরনো সেতুটি সরিয়ে নেন। তারা ছোট ছোট দড়িগুলোকে একসাথে করে নেন৷ এটাই সেতুর প্রধান ভিত্তি৷ প্রায় ১ ফুট মোটা হয়ে থাকে। অন্তত ১২০টি দড়ি পেঁচিয়ে এমনটা তৈরি করা হয়।
সেতু বানানোর সময় ইনকারা বিভিন্ন কাজ ভাগ করে নেন৷ রান্নার কাজে যারা যুক্ত থাকেন তারা ঘাস নিয়ে কোনও কাজ করবেন না৷ যারা বেশি সাহসী তারই ঝুঁকি নিয়ে সেই ঘাসের দড়ি এক পাহাড়ের মাথা থেকে অন্য পাহাড়ের মাথা পর্যন্ত নিয়ে যান৷ তারপর সেই প্রধান দড়ি দিয়েই তৈরি করা হয় সেতু৷ ঝড় জল হোক বা প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগ-একেবারে নিখুঁত থাকে এই ঘাস৷ কিন্তু এক বছরের মাথায় এসে সেটি ফেলে দিতেই হবে৷ ইনকারা মনে করেন প্রকৃতির দেওয়া দানের এই মেয়াদ মাত্র একবছরই৷