লঞ্চ হচ্ছে কটকাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম। পর্যটকদের নিয়ে লঞ্চ কটকা খালে নোঙ্গর করা হয়। খালের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে কটকা বন বিভাগের কার্যালয়, সেখান থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে ইট বাঁধানো পথের দেখা মিলে। এই পথে সামনে গেলে অপূর্ব বুনো কটকা সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত দেখার জন্য কটকা সমুদ্র সৈকত একটি আদর্শ স্থান।

Image result for কটকা সমুদ্র সৈকত

বন বিভাগ কার্যালয়ের পেছনে কাঠের তৈরি টেইলের উত্তর দিকে কেওড়ার বনের একটু নিরিবিলি জায়গায় গেলে অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রা হরিণের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে বানর, বন্য শুকর, বনবিড়াল এবং নানা প্রজাতির পাখির সাথে শীতকালে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। বনের দক্ষিণে তিনটি টাইগার টিলায় প্রায়শই বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। পূর্বে রয়েছে ঘন বন আর মিঠা জলের পুকুর। এই পুকুরই এখানকার কর্মরত কোস্টগার্ড, ফরেস্ট অফিসার এবং স্থানীয় জেলেদের পানি একমাত্র উৎস।

Image result for কটকা সমুদ্র সৈকত

খরচ

অভয়ারণ্য এলাকায় দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনের জনপ্রতি ভ্রমণ ফি – ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য – ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি – ৭০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১০০০ টাকা ও গবেষকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ৪০ টাকা। করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা।

Image result for কটকা সমুদ্র সৈকত

হেলিকপ্টার/সী প্লেনের জন্য এককালীন ফি লাগে ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন করতে ফি দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। ১০০ ফুটের ঊর্ধ্বে লঞ্চের জন্য দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা, নবায়ন ফি দিতে হয় চার হাজার টাকা। ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট লঞ্চের জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা দিতে হয় আর নবায়ন ফি লাগে তিন হাজার টাকা। ৫০ ফুটের নিচে নৌযানের জন্য সাড়ে সাত হাজার টাকা ও এদের জন্য নবায়ন ফি লাগে আড়াই হাজার টাকা। সাধারণ ট্রলার তিন হাজার টাকা ফি-তে সুন্দরবন অবস্থান করতে পারে, এদের নবায়ন ফি – ১৫০০ টাকা। স্পিডবোটের জন্য ফি দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা, নবায়ন করতে লাগে দুই হাজার টাকা। জালিবোট যেগুলো ট্যুরিস্ট বোট হিসাবে খ্যাত সেগুলোর জন্য এককালীন ফি দিতে হয় দুই হাজার টাকা ও নবায়ন ফি এক হাজার টাকা লাগে।

বন বিভাগের ভ্রমণ ফি ছাড়াও অন্যান্য খরচের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন গাইডের জন্য ফি ৫০০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ডদের জন্য ফি ৩০০ টাকা, লঞ্চের ক্রুর জন্য ফি ৭০ টাকা, টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা। ভিডিও ক্যামেরা বাবদ দেশি পর্যটকদের ফি দিতে হয় ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের ফি দিতে হয় ৩০০ টাকা।

Image result for কটকা

সুন্দরবনে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি ফি দিতে হয় ৫০ টাকা, নিবন্ধনকৃত ট্রলার ফি ২০০ টাকা, অনিবন্ধনকৃত ট্রলারের ফি ৮০০ টাকা এবং প্রতিদিন অবস্থানের জন্য ট্রলারের ফি ২০০ টাকা। টাকা কমবেশি লাগতে পারে।

কিভাবে যাবেন

বর্তমানে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। ভাল ট্যুর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের সাথে সুন্দরবনে যেতে পারবেন সহজেই। এই সব প্রতিষ্টানের লোকদের মাধ্যমে কটকায় যেতে পারবেন।

লঞ্চ হচ্ছে কটকাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম। পর্যটকদের নিয়ে লঞ্চ কটকা খালে নোঙ্গর করা হয়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাগেরহাটগামী বিভিন্ন বাস চলাচল করে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় মেঘনা পরিবহন ও পর্যটক পরিবহন এর বাস। আর গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে সাকুরা পরিবহন এবং সোহাগ পরিবহন এর বাস ছাড়ে। চাইলে কমলাপুর থেকে ট্রেনের মাধ্যমে খুলনা আসতে পারেন। খুলনা থেকে রুপসা কিংবা বাগেরহাটের মংলা বন্দর থেকে সুন্দরবন যাওয়ার লঞ্চ পাবেন। এছাড়াও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা থেকেও সুন্দরবনে যাওয়ার বিভিন্ন নৌযান ভাড়া করতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। নীলকমলে থাকতে চাইলে দেশি পর্যটকদের প্রতি কক্ষের জন্য তিন হাজার টাকা লাগবে আর বিদেশিদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষের জন্য লাগবে তিন হাজার টাকা আর বিদেশিদের জন্য লাগবে পাঁচ হাজার টাকা। কটকাতে প্রতি কক্ষ নিতে দুই হাজার টাকা লাগবে এবং বিদেশিদের জন্য রুম প্রতি পাঁচ হাজার টাকা লাগবে।

বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন আবাসিক হোটেল ব্যবস্থা নেই। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া মমতাজ হোটেলের আশেপাশে অন্য হোটেলগুলোতেও থাকার জন্য খোঁজ নিতে পারেন।

মংলায় থাকার জন্যে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল আছে। পশুর বন্দরে পর্যটকদের থাকার জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে।

সাতক্ষীরা শহরে থাকতে চাইলে এখানে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাবেন। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।

খুলনা নগরীতে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তথ্য সূত্রঃ ভ্রমন গাইড।