ডিএমপি নিউজ রিপোর্ট: চলচ্চিত্রে সরাসরি কোনো ধর্ষণের দৃশ্য দেখানো যাবে না। একইসঙ্গে অপরাধীদের কার্যকলাপের কৌশল প্রদর্শন যা অপরাধের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির প্রবর্তন ও মাত্রা আনতে সহায়ক হতে পারে এমন দৃশ্যও পরিহার করতে হবে। এই ধরণের বাধ্যবাধকতা রেখে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা-২০১৭’ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুস্থধারার চলচ্চিত্র সম্প্রসারিত ও উৎসাহিত করতে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে মন্ত্রিসভা চলচ্চিত্র নীতিমালা পাস করল।’
তিনি নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সর্ম্পকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আদর্শ ও চেতনা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শন নিশ্চিত করা। এছাড়াও সুস্থ্য, শিক্ষামূলক ও বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ বিতরণ ও প্রদর্শন করতে সরকার এবং বেরকারি পর্যায়ে নীতিগত ও অবকাঠামোগত ও কারিগরি সহায়ত দিতে করণীয় বিষয়াদি সুনির্দিষ্ট করা। এই নীতিমালা অনুযায়ী অনুসরণীয় মানদন্ড হবে- চলচ্চিত্রে পরিবেশিত তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা, পেশাগত নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা, চলচ্চিত্র নির্মাণ বিতরণ ও প্রদর্শনে দায়িত্বশীলতা।
কোনো চলচ্চিত্রে কোনোভাবেই রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা সমুন্নত রাখতে হবে। বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য পরিবেশন করা যাবে না। চলচ্চিত্রে দেশিয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার সুষ্ঠু প্রতিফলন এবং এর সঙ্গে জনগণের নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন ও সাংস্কৃতিক ধারাকে দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে’।
চলচ্চিত্রে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার সুষ্ঠু প্রতিফলন ঘটাতে হবে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘সকল ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং ধর্মীয় সহিংসতারোধে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে।’
শিশু বা নারী কিংবা উভয়ের প্রতি সহিংসতা বা বৈষম্যমূলক আচরণ বা হয়রানিমূলক কর্মকান্ডকে উদ্বুদ্ধ করে- এমন কোনো ঘটনা ও দৃশ্য চলচ্চিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না- জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চলচ্চিত্রের সংলাপে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা পরিহার করতে হবে।’
তিনি জানান, নীতিমালা অনুযায়ী চলচ্চিত্র আমদানি ও রফতানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। এ কমিটি কোনো চলচ্চিত্র আমদানি বা রফতানির সুপারিশ করবে। পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের জাতীয় চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি থাকবে। এই কমিটি নীতিমালার আলোকে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ দেবে। চলচ্চিত্রের সৃজনশীলতা বজায় রাখতে কপিরাইট ও অন্যান্য মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও নীতিমালায় রয়েছে বলে জানান সচিব।
সেন্সর শব্দটি একটু নেতিবাচক, নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট বহন করে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এজন্য বিভিন্ন দেশে সেন্সরের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেশন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও পর্যায়েক্রমে সেন্সর সিস্টেম বাদ দিয়ে সার্টিফিকেশন সিস্টেম প্রবর্তন করা হবে।’
শফিউল আলম জানান, ‘চলচ্চিত্রের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। প্রেক্ষগৃহগুলো বাণিজ্যিক ভবন হয়ে যাচ্ছে, দোকানপাট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’ ৬৪ জেলায় ৬৪টি সরকারি তথ্য ভবন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ভবনে একটি করে সিনেপ্লেক্স থাকবে। সরকারি অনুদান দিয়েও বিভিন্ন জেলায় ডিজিটাল সিনেপ্লেক্স করা হবে।’
দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগের কথাও নীতিমালায় বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মানোন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনে যৌথ বিনিয়োগ উৎসাহিত ও বাজার সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট দেশের চলচ্চিত্রের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, প্রযোজক সমন্বয়ে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের নির্মাণ উৎসাহিত করা হবে।’