দেশে চা-পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক বছর দেশে চা-পাতার উৎপাদন কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে বিদেশ থেকে চা আমদানি করতে হয়েছে। আর এবার দেশে চা-পাতার ফলন ভালো হওয়ায় বছরের প্রথম তিন মাসেই গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি চা রপ্তানি হয়েছে।
টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি) সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে দেশে চা-পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৮৫ দশমিক ০৫ মিলিয়ন কেজি। গত বছর চা-পাতা রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র দশমিক ৬২ মিলিয়ন (ছয় লাখ ২০ হাজার) কেজি। আর ২০১৫ সালে চা-পাতা উৎপাদিত হয়েছিল ৬৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন কেজি। রপ্তানির পরিমাণ ছিল গত বছরের তুলনায় কম। সেই বছর মাত্র দশমিক ৫৫ মিলিয়ন কেজি চা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছিল।
দেশে চা-পাতার বাম্পার ফলন হওয়ায় বছরের শুরুতেই চা রপ্তানির চিত্র পাল্টে গেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে চা রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি। মৌসুম শেষে উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে বাগান মালিকরা।
বাগান মালিকরা জানায়, চা উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া এবং বাগানে নতুন বিনিয়োগের কারণে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
চা নিলাম শুরু ২৫ এপ্রিল : নতুন পাতা নিয়ে মৌসুমের প্রথম নিলাম শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ এপ্রিল। গত মৌসুমের নিলাম শেষ হয়েছে গত ২১ মার্চ। গত বছরের মতো এবারও চা-পাতার বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামী ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য নতুন মৌসুমের প্রথম নিলামে বিপুল পরিমাণ চা-পাতার সমাগম হবে বলে আশা করছে ব্যবসায়ীরা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছর ২৬ এপ্রিল ২০১৬-১৭ মৌসুমের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ওই নিলামে ১ দশমিক ৮১ মিলিয়ন (১৮ লাখ ১৫ হাজার) কেজি চা-পাতা বিক্রির জন্য ওঠে। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশ পাতাই কিনে নেয় ক্রেতারা।
আর চলতি বছরের ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত গত মৌসুমের শেষ নিলামে উঠেছিল দশমিক ৮৪ মিলিয়ন (আট লাখ ৪২ হাজার ৯৪৪) কেজি পাতা। এর মধ্যে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এদিন ব্রোকেন চা বড় দানা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মাঝারি ৯৫ থেকে ১২৫ টাকা, ছোট দানা ১০০ থেকে ১২৫ টাকা ও মিহি ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়। ফেনিংস চা মান ভেদে ৮৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং ডাস্ট চা ১০০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বরাবরের মতো চূড়ামণি ডাস্ট ওই নিলামেও ১৬০ থেকে ২১১ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদায়ী বছরেও দেশের চা উৎপাদন ভালো থাকায় বছরজুড়েই চট্টগ্রামে অবস্থিত আন্তর্জাতিক নিলামকেন্দ্রে চায়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। যে কারণে মোটামুটি সহনশীল পর্যায়ে ছিল চায়ের দাম।
টিটিএবির সাবেক সহসভাপতি আবদুল হাই চৌধুরী জানান, বিদায়ী মৌসুমের শেষ নিলামে অবিক্রীত পাতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। বছরের শেষ দিকের এসব পাতার মানও খুব একটা ভালো ছিল না। যে কারণে অতিরিক্ত নিলাম অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে রয়েছে দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক চা নিলামকেন্দ্র। বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে ছয়টি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে দেশের ১৬২টি চা বাগানে উৎপাদিত চা-পাতা এখানে নিলাম করা হয়ে থাকে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। দেশি-বিদেশি ক্রেতারা এ নিলামে অংশ নিয়ে থাকে।