রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চিকণগুনিয়া নামে এক ধরনের ভাইরাস জ্বর দেখা দিয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু জ্বরই শেষ নয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের সকল জয়েণ্টে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। যার জন্য রোগীর মারাত্বক কষ্ট ভোগ করতে হয়। তিন থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এই জ্বর ও ব্যাথা থাকে। এডিস মশার কামড়ে এই জ্বর হয়।
একই মশা তিন ধরনের ভাইরাস ছড়ায়। যা মানুষের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এতে চিকণগুনিয়া, ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাস রয়েছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত নভেম্বর মাসে রাজধানীর কলাবাগানসহ দুই একটি স্থানে চিকণগুনিয়া জ্বর শুরু হয়। এরপর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এখন রাজধানীজুড়ে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানে এই জ্বরে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই রোগ হলে রোগী প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হবে। এরপর আস্তে আছে তার সমস্ত শরীরের জয়েণ্টে প্রচন্ড ব্যাথা হয়। এই ব্যাথা কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮৬২ সালে সর্বপ্রথম তানজানিয়ায় চিকণগুনিয়া রোগ দেখা দেয়। ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে এই রোগ দেখা দেয়। এরপর ২০০৯, ২০১১, ২০১২, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এই জ্বর ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে দোহার, টাঙ্গাইল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই রোগে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইণ্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর ডাঃ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলছিলেন, নতুন করে এই জ্বর দেখা দিয়েছে। তবে ভয়ের কোন কারন নেই। এই রোগ নির্ণয়ের নতুন কিট বের হয়েছে। বাংলাদেশে আগে ছিল না। এখন পাওয়া যায়। এই রোগের বাহক এডিস মশা। এটা এক ধরনের ভাইরাস জ্বর। কষ্ট হয়। শরীরে জয়েণ্টে ব্যাথা ও অস্বস্তি লাগে। ব্যাপক হারে শরীরে জ্বালা যন্ত্রণা দেখা দেয়। মাঝে মধ্যে শরীরে চুলকানি ও গায়ে লাল রেশ হয়। এটা কয়েক সপ্তাহ থাকে। সম্প্রতি এই জ্বর ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ব্যাক্তিকে যে মশা কামড় দিবে ওই মশা আরেক জনকে কামড় দিলে তারও এই জ্বর হবে। এটা প্রতিরোধে মশা নিধন একমাত্র উপায় বলে তিনি মনে করেন।
এই সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী মুঠোফোনে বলেন, চিকণগুনিয়া এক ধরনের মশাবাহিত ভাইরাস। এর উপসর্গ সিনড্রম ডেঙ্গুর মত হলেও আতংকিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এতে মৃত্যু হয় না। রক্তের অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট ১ লাখ থেকে দেড় লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ভাইরাস জ্বর হলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এ জ্বরের জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেলেই হয়। তবে সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় ধরে জ্বর দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।