চিকুনগুনিয়া জ্বরে সবচেয়ে কষ্টকর হচ্ছে অস্থিসন্ধির তীব্র ব্যথা, বিশেষ করে যাদের বাতজনিত ও ইউরিক এসিডের সমস্যা রয়েছে, তাদের ব্যথা অনেক বেশি হয় এবং দীর্ঘদিন থাকে। তবে কিছু খাবার আছে, যা গ্রহণ করলে চিকুনগুনিয়া জ্বর নিরাময়ের পাশাপাশি এসংক্রান্ত ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় অনেকটাই।
লেবু/মালটা
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, যা ব্যথা ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং মানবদেহের কোষ থেকে ক্ষতিকারক জীবাণু বের করতে লেবুর ভূমিকা অপরিসীম। এ ছাড়া নতুন কোষ গঠনে, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং অস্থি বা হাড়ের সংযোগস্থল ফুলে গেলে এটি বেশ কার্যকর।
প্রণালী : দৈনিক দুই টেবিল চামচ লেবুর রস, এক টেবিল চামচ পার্সলে পাতার (দেশে পাওয়া যায়) পেস্টের সঙ্গে এক চা চামচ মধু দিয়ে এক গ্লাস করে দিনে দুইবার পান করলে ব্যথা কমে যায় অনেকটাই। পার্সলে পাতা ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আবার দুটি করে মালটা জুস করে দিনে দুইবার পান করলেও ব্যথায় যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
রসুন
রসুনে রয়েছে সালফার, ভিটামিন-সি ও অত্যাবশ্যকীয় খনিজ লবণ। হাড়ের সন্ধিস্থলের প্রদাহ উপশমে রসুনের ভূমিকা অতুলনীয়।
প্রণালী : দৈনিক ৫ থেকে ১০ কোয়া রসুন দিয়ে মুরগি বা মাছের স্যুপ রান্না করে খেলে তিন-চার দিনের মধ্যে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ খাবার শরীরের দূষিত জীবাণু নিষ্কাশিত করতে সাহায্য করে।
আঙুর বা কিশমিশ
আঙুর আমাদের শরীরে ফ্ল্যাবিনয়েড নামক এন্টি-অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রাকৃতিকভাবে আঙুর মানবদেহের রক্ত কোষ পরিষ্কার এবং দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, সেলিনিয়াম, পটাসিয়াম রয়েছে। এ জন্য একে সুপার ফুট আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মাংশপেশি ও অস্থির ব্যথা উপশমে এর ভূমিকা অপরিসীম।
প্রণালী : এক কাপ পানি, এক মুঠো আঙুরের রস, এক চা চামচ মধু দিয়ে দিনে দুইবার পান করুন।
অথবা দুই মুঠো কিশমিশ এক কাপ পানিতে ব্লেন্ড করে, লেবুর রস দুই চা চামচ মিশিয়ে পান করুন। এক মুঠো কিশমিশ, এক গ্লাস দুধ দিয়েও পান করতে পারেন। আশা করা যায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে উপকার পাওয়া যাবে।
তুলসীপাতা
রক্তে উৎপাদিত ক্ষতিকারক পদার্থের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে তুলশীপাতা। এটি অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও ব্যবহূত হয়। চিকুনগুনিয়ার ব্যথায় এ পাতা বেশ কার্যকর।
প্রণালী : ২০-২৫টি তুলশীপাতা পেস্ট করে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তিনে দুইবার পান করুন।
পেঁপে/পেঁপেপাতা
পেঁপের মধ্যে রয়েছে পেকটিন নামক এক ধরনের পদার্থ। এটি হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথা নিরসন ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এতে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’, পটাসিয়াম ও বিটা ক্যারোটিন রয়েছে।
প্রণালী : পাকা পেঁপের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া পেঁপেপাতা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা সিদ্ধ করে ছেঁকে এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ডাবের পানি
যেকোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডাবের পানি বেশ কার্যকর। এটি রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় শ্বেত রক্ত কণিকার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
প্রণালী : দৈনিক তিন-চার গ্লাস ডাবের পানির সঙ্গে দুই টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পানি করুন।
শজনেপাতা
এমন কোনো উপাদান নেই, যা এই শজনেপাতায় নেই। যে কারণে একে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে। আফ্রিকায় চিকুনগুনিয়ার ব্যথায়, বাতের ব্যথায় এ পাতার ব্যবহার প্রচুর পরিমাণ হয়ে থাকে। এই পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখা যায় আবার কাঁচা অবস্থাও খাওয়া যায়।
প্রণালী : দৈনিক দুইবার এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ এই পাতার গুঁড়া বা পেস্ট করে দুই টেবিল চামচ লেবুর রস ও এক চা মধু মিশিয়ে পান করুন। বিস্ময়কর ফল পাওয়া যাবে।
হলুদ
হলুদে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। হলুদ প্রাকৃতিকভাবে জীবাণুনাশক এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি হাড়ের ব্যথায়, মাংসপেশি ফুলে গেলে এবং দেহের কোষে কোনো ধরনের ভাইরাল ইনফেকশন হলে দ্রুত নিরাময় করে।
প্রণালী : দুই চা চামচ হলুদ গুঁড়া হালকা ভেজে এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি রাতে শোবার আগে পান করুন। এ ছাড়া আদার রস, সবুজ চা ব্যথা উপশমে বেশ কাজ করে।