ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে চীনা নাগরিক হত্যাকান্ডে জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত ১৭/১২/১৯ ইং তারিখ রাজধানীর বনানী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-১। রউফ ও ২। ইনামুল । এ সময় তাদের হেফাজতে হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত ০১ টি ভাঙ্গা মোবাইল, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা, বালতি ও লাশ মাটি চাঁপা দেয়ার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত কাঠের টুকরা এবং ১,২১,৫০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১.৩০টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোঃ আবদুল বাতেন বিপিএম, পিপিএম।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা বনানীর ২৩ নং রোডের ৮২ নং বাসার সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলো এবং তারা উক্ত বিল্ডিং এর ছাদে বসবাস করতো। একত্রে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা হাউজে বসবাসকারী বিত্তবান লোকদের জীবনযাত্রা দেখে আর নিজেদের দৈন্যদশা দেশে হতাশাগ্রস্ত হয় এবং নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় বারবার কিভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় তা ভাবতে থাকে। এক পর্যায়ে হত্যাকান্ডের বেশ কয়েকদিন আগে রউফ প্রস্তাব দেয় যে চীনা নাগরিক গাও বস অনেক বড় ব্যবসায়ী, অনেক টাকা পয়সা নিয়ে আসা-যাওয়া করে এবং ফ্ল্যাটে একা থাকে। তাকে শেষ করে দিয়ে যা নিতে পারব তা দিয়ে জীবনে কিছু করা যাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। এদিকে তারা নিশ্চিত হয় যে, বিল্ডিংয়ে সিসিটিভি ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ড হয় না। কারন হার্ডডিস্ক নাই। ০৬/১২/২০১৭ ইং তারিখে একবার তারা মি. গাও কে হত্যার চেষ্টা করে। ঐদিন তারা সন্ধ্যায় চীনা নাগরিক মি. গাও এর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট (6B+5B) তে কলিং বেল দেয়। কিন্তু ভিতর থেকে কেউ দরজা না খোলায় ভয়ে তারা আবার ফিরে আসে। এরপর ১০/১২/২০১৯ তারিখে তারা পুনরায় পরিকল্পনা করে যে আজকে কাজ শেষ করতেই হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইনামুল তার নিজের ব্যবহৃত গামছা সাথে নিয়ে যায়। মাগরিবের আযানের পরপরেই তারা মি.গাও এর ফ্ল্যাটের সামনে যায় এবং রউফ কলিং বেল এ চাপ দেয়। মি.গাও দরজা খুলে ওদের দিকে বিস্ময়ে তাকায়। তিনি বাংলা ও ইংরেজী ভাষাই জানতেন না। তবে ইশারায় জানতে চাচ্ছিলেন যে, কি বিষয়? তখন ইনামুল বলে water water. মানে বুঝাতে চায় যে তারা পানি খাবে। মুহুর্তের মধ্যেই তারা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং ইনামুল গলায় গামছা পেচিয়ে ধরে এবং রউফ কোমরের দিকে জাপটে ধরে। অল্প সময়ের মধ্যেই মি. গাও এর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মি. গাও রউফ এর বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কামড়ে দেয়। তারা ২/৩ মিনিটের মধ্যেই মি. গাও এর মৃত্যু নিশ্চিত করে। ফ্ল্যাটের ভিতরে ড্রয়িং রুমের টেবিলের উপরে মি. গাও এর ল্যাপটপ খোলাই ছিলো এবং পাশে ছিল তার সার্বক্ষণিক সাথে থাকা একটি ছোট ব্যাগ। রউফ ঐ ব্যাগটি খুলে সেখানে থাকা ৩টি ১০০০ টাকার বান্ডিল, কিছু খুচরা টাকা ও মোবাইল নিজেদের হেফাজতে নেয়। এরপর মি. গাও এর মৃতদেহ ড্রয়িং রুম এ নিয়ে গামছা দিয়ে রক্ত মুছে দিয়ে বের হয়ে ছাদে চলে যায় ছাদে গিয়ে গামছা ধুয়ে ও নিজেরা গোসল করে একসাথে দুজনের বের হয়ে যায়। টাকাগুলো গনণা করে ভাগ করে নেয়। রউফ নেয় ১,৭৬,০০০/-(এক লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার) টাকা এবং এনামুলকে দেয় ১,৭৩,০০০/-(এক লক্ষ তিহাত্তর হাজার) টাকা। তারা বনানী সুপার মার্কেটের পাশে একটি চায়ের স্টলে বসে চা খায় এবং টাকাগুলো কি করবে তা নিয়ে আলোচনা করে। রউফ সুপার মার্কেটের আশেপাশে থাকা তিনটি বিকাশ এর দোকান থেকে বিকাশ এর মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়িতে বন্ধু হাসান এর কাছে ১,৫৫,০০০/-(এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার) টাকা পাঠিয়ে দেয়। ইনামুল চারটি বিকাশ এর দোকান থেকে তার নিজের বিকাশে ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা, এলাকার বড় ভাই করিম (মিরপুরে বাসাবাড়ির ম্যানেজার) এর কাছে ৫০,০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা, বন্ধু শাহীন এর কাছে ৪০,০০০/-(চল্লিশ হাজার) টাকা এবং তার মেজো ভাবীর কাছে ৩০,০০০/-(ত্রিশ হাজার) টাকা সহ সর্বমোট মোট ১,৭০,০০০/-(এক লক্ষ সত্তর) হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়।
ঐদিন ২২.৩০ টায় রউফ সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ডিউটি করে। অনুমান ২৩.০০ টায় রউফ বিল্ডিং এর পিছনের দিকে বালু মাটিতে কাঠের টুকরো দিয়ে গর্ত করে উপরে উঠে। তার অপর একজন সিউিরিটি গার্ডের সহায়তায় লিফট ব্যবহার করে ভিকটিমের লাশ মাটি চাঁপা দেয়। পরের দিন মি. গাও এর ড্রাইভার, কাজের বুয়া তাকে তার বাসায় না পেয়ে এবং তার ব্যবহৃত সেন্ডেলে রক্তের দাগ দেখে খোঁজা খুজি শুরু করে। একপর্যায়ে মি. গাও এর ড্রাইভার সুলতান বিল্ডিং এর পিছনে মাটি চাঁপা অবস্থায় পায়ের গোড়ালি দেখে এবং পরবর্তী সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য যে, মি. গাও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি উক্ত ফ্ল্যাটে দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ বসবাস করতেন। তিনি চীন থেকে পাথর ও নিমার্ণ সামগ্রী আমদানি করে পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরে সাপ্লাই করতো।