ডিএমপি নিউজঃ সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণ এবং পুলিশ একসাথে কাজ করলে সকল অপরাধ দমন করে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। আসুন আমরা পাড়ায়-পাড়ায় ও মহল্লায়-মহল্লায় সন্ত্রাস, মাদক ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকাই রুখতে পারে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম।
আজ (২৪ জুন) সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর হোটেল বেঙ্গল ব্লুবেরী গুলশান ২ এ আয়োজিত ‘‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ছাড়া ও কমিউনিটি ইনভলভমেন্ট ছাড়া কোন পুলিশি কাজে সফলতা আসতে পারে না। এখানে যাঁরা আছেন তাঁরা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা এই মহানগরীতে সাধারণ নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১ জুলাই ২০১৬ সালে হলি আর্টিসান হামলায় আমরা দমে যায়নি। আমাদের সহকর্মীর রক্তকে আমরা বৃথা যেতে দেয়নি। আমাদের সিটিটিসি’র সদস্য বাংলাদেশের সোনালী সন্তান। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশে তারা একের পর এক সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের শেখরকে টেনে ধরে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। হলি আর্টিসানের পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাধারণ জনগণ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে আমরা সফল হয়েছি।
নগরবাসীর নিরাপত্তা বিঘ্ন হয় এমন কাজ আমরা কাউকে করতে দিবোনা জানিয়ে কমিশনার বলেন, ভিশন ২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জন করতে হলে চাই টেকসই নিরাপত্তা। এই টেকসই নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমরা কমিউনিটি পুলিশের পাশাপাশি বিট পুলিশ প্রবর্তন করেছি। আমরা ঢাকা মহানগরের ৫০ থানায় ৩০২টি বিটে হাজার হাজার উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সন্ত্রাস, উগ্রবাদ, মাদক, ইভটিজিং ও ভূমিদস্যুসহ সকল অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছি। সদ্য সমাপ্ত হলো নাগরিক তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ। আমরা এতে জনগণের অভাবনীয় সমর্থন পেয়েছি। CIMS এ বর্তমানে ৬৫ লক্ষ নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা আশা করছি এই এক সপ্তাহে আরো ৫ লক্ষ নাগরিকের তথ্য সংযুক্ত হবে। ঢাকা শহরের প্রতিটি নাগরিকের তথ্য CIMS এ অন্তর্ভূক্ত করে অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধ উদঘাটন ও অপরাধীকে সনাক্তকরণ করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, নাগরিকের তথ্য নিজ দায়িত্বে থানায় জমা দিন। তাহলে আমরা বুঝতে পারব পরিচয় গোপন রেখে কেউ ঢাকায় বাসা ভাড়া করেছে কি না। পরিচয় গোপন রেখে ঢাকা শহরে কেউ বাসা ভাড়া নিতে পারবে না। হলি আর্টিসান হামলার পর আমাদের এমন উদ্যোগের ফলে ঢাকা শহরে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে এবং আমরা যেভাবে আইন প্রয়োগ করছি এটির সমন্বয় ঘটাতে পারলে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদকে আমরা রুখতে পারব। উগ্রবাদকে রুখতে হলে আপনার বাসা, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামের স্থাপন করেন।
এছাড়াও কমিশনার বলেন, সবার কর্মঘন্টা থাকলেও আমাদের কর্মঘন্টা নেই। আমরা কর্মঘন্টার বাহিরে কাজ করে আপনাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সত্যিকার অর্থে জনগণের পুলিশ হতে চাই। জনবান্ধব, নারীবান্ধব ও শিশুবান্ধব একটি পুলিশ সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় আমাদের এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্ঠায় আপনাদের সহযোগিতা চাই।
সমাজের নিরাপত্তায় জনপ্রতিনিধিদের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জানিয়ে ডিএনসিসি’র মেয়র বলেন, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় উদ্বেগ। উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস দমন একটি বড় কাজ। ঘরে এসিতে বসে এই কাজ করা সম্ভব নয়। আপনারা জনপ্রতিনিধিগণ যার যার অবস্থান থেকে জনগণকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও মাদক প্রতিরোধে কমিটি গঠন করে কাজ করুন। খেলাধুলা ও খেলার মাঠ যুব সমাজের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২৪টি মাঠ এমনভাবে গড়ে তুলছি, যেখানে সব বয়সের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলাধুলা ও অবসরে বিনোদন করতে পারবে। এমনকি শুধু দিনে নয় রাতেও যাতে খেলাধুলা করতে পারে সেজন্য আলোর ব্যবস্থাও করছি। যাতে করে অভিভাবক তার সন্তানকে এই মাঠে খেলা করতে পাঠাতে নিরাপদবোধ করে। আমরা অতিদ্রুত এই মাঠগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিবো।
তিনি আরো বলেন, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনপ্রতিনিধিগণ এ বিষয়ে নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক কেন্দ্রসহ সব জায়গায় উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এমন আয়োজনের জন্য ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে মনিরুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সকলে সাড়া দিয়ে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় আমাদের সফলতা এসেছে। নির্বাচিত এলাকায় জনগণের সাথে জনপ্রতিনিধিদের নাড়ির সম্পর্ক ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু আপনারা অগ্রসরমান ও নির্বাচিত অংশ সেহেতু আপনাদের মাধ্যমে আমরা সেসব মানুষের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছাতে চাই। তাদেরকে সতর্ক করার কাজ করতে চাই। আমরা ইতোমধ্যে মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাংবাদিক, পুলিশ ও আইনজীবীদের সাথে সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় করেছি। আমরা মনে করি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস দমনে জনপ্রতিনিধিগণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। নিরাপদ বাংলাদেশের প্রধানতম হুমকি সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ। আসুন আমরা একসাথে সকলে মিলে কাজ করে উগ্রবাদ রুখে দিয়ে নির্মূল করি।
এরপর সেমিনারের দ্বিতীয় সেশনে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিগণের সাথে উগ্রবাদ প্রতিরোধে তাদের কি করণীয়? সে বিষয়ে মতবিনিময় করেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ, ডিএনসিসি’র কর্মকর্তা, ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প আওতায় ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।