ফুটবল জাদুকর বা ফুটবলের রেকর্ডের বরপুত্র লিওনেল মেসি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বিয়ে করলো । দীর্ঘদিনের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে গাটছাড়া বেঁধেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
শুক্রবার মেসির নিজ শহর রোজারিওর এক বিলাসব্হুল হোটেলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। স্থানীয় সময় রাত ১০টায় রোজারিওর হোটেল সিটি সেন্টার ক্যাসিনো কমপ্লেক্সে রোকুজ্জোকে বিয়ে করেছেন মেসি। মেসি-রোকুজ্জোর বিয়ে এরই মধ্যে পেয়ে গেছে গত কয়েক দশকে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের স্বীকৃতি।
দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে থাকছেন মেসি-রোকুজ্জো। তবে দুজনের পথ চলা শুরু আর্জেন্টিনার রোজারিওতে, ১৯৯৬ সালে। মেসির বয়স তখন ৯, রোকুজ্জোর ৫। তখন থেকেই প্রেম! আসলে প্রেম বলা যাবে না! তখন থেকেই দুজনের উঠা-বসা। বন্ধু লুকাস ক্যাগলিয়ার কাজিন রোকুজ্জো। ফলে মেসি-রোকুজ্জোর সাক্ষাৎ হতো হরহামেশাই।
সেই মেসির বয়স আজ ৩০, রোকুজ্জোর ২৬। অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও দুজনের প্রতি দুজনের টান একটু পাল্টেনি। দুজনের ঘরে রয়েছে দুই ছেলে, থিয়াগো ও মাতেও। ২০০৭ সালের ২০ জুলাই নিজেদের সম্পর্ক প্রকাশ্যে স্বীকারের পর ২০০৯ সাল থেকে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন তারা। ২০১২ সালের ২ নভেম্বর মেসির প্রথম সন্তান থিয়াগোর জন্ম হয়। তিন বছর পর রোকুজ্জোর কোলজুড়ে আসে মাতেও।
বিয়েতে অতিথির সংখ্যা ২৬০ জন। মেসির সতীর্থরাও ছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। ছিলেন পুরোনো সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজও। বার্সেলোনার পুরো ব্যাকরুম স্টাফও আছে অতিথির তালিকায়। এর মধ্যে আছে কিটম্যান, ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, ম্যাসিউর। আছেন খেলোয়াড়দের যোগাযোগ কর্মকর্তা পেপে কোস্তাও। অতিথিদের তালিকায় ছিলেন লুইস সুয়ারেজ, নেইমার, জেরাড পিকে এবং তার স্ত্রী পপগায়িকা শাকিরা। বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বিয়েতে যোগদানে অতিথিরা বৃহস্পতিবার স্থানীয় বিমানবন্দরে নেমেছিল ১২টি বিমানে, যা একদিনে সর্বোচ্চ। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিলেন মেসি। প্রমোদ ভ্রমণে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলের ‘বাউন্সার’পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।
রোকুজ্জোর বিয়ের গাউন ডিজাইন করেছেন স্প্যানিশ ফ্যাশন ডিজাইনার রোসা ক্লারা। যিনি স্পেনের রানী লেতিজিয়ার বিয়ের পোশাকও তৈরি করেছিলেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছিল উরুগুয়ের বিখ্যাত পপ ব্যান্ড ‘রম্বাই অ্যান্ড মারামা’। মেসির সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ‘রম্বাই অ্যান্ড মারামা’ ব্যান্ডকে এনে দিয়েছেন। তবে ম্যারাডোনার প্রাক্তন জামাতা অ্যাগুয়েরোর বর্তমান স্ত্রী কারিনা গান গেয়েছিলেন।
মেসির বিয়ের খাওয়া-দাওয়ার মেনুতে ছিল বিখ্যাত লোক্রো স্টু ও এস্প্যানাদা প্যাস্টি। এ ছাড়া থাকছে আর্জেন্টিনার বিখ্যাত গরুর রোস্ট।
আন্তর্জাতিক ১৫৫ জন সংবাদিককে ‘অ্যাক্রিডিটেশন’ কার্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে অতিথিদের কাছে যেতে পারেননি তারা। নিতে পারেননি কোন সাক্ষাৎকারও। বিয়েতে অতিথিদের উপহার না দিতে অনুরোধ করেছিলেন মেসি-রোকুজ্জো। তবে উপহারের অপশন খোলা রেখেছেন তারা। অতিথিদের অনুরোধ করেছেন ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশনে’ উপহারের অর্থ দান করতে। বিশ্বজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখা, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা নিয়ে কাজ করেছে ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন।’
এদিকে আর্জেন্টিনার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মেসি-আন্তোনেল্লার এ বিয়েকে আখ্যা দেয়া হয়েছে ‘শতাব্দীর সেরা বিয়ে’ ও ‘বছরের সেরা বিয়ে’ হিসেবে।