ঢাকা মহানগরীতে জলাবদ্ধতা মহা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মাঝারী ধরণের বৃষ্টিপাত হলেই প্রায় সমগ্র নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সমস্যা দূরীকরণে একটি আধুনিক ও সুদূর প্রসারী মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
রোববার রাজধানীর গুলশান সেন্টার পয়েন্টে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী-র নির্দেশে নগরীর জলাবদ্ধতা ও তা দূরীকরণ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩য় আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সভায়” প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা ১১-এর সংসদ সদস্য এ কে এম রহমত উল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব, দপ্তর ও সংস্থা প্রধান, নগর বিশেষজ্ঞ ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ।
সভায় ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা ও তার সমাধানে নগর পরিকল্পনাবিদ, অধ্যাপক, গবেষক, সিটি কাউন্সিলর, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও দপ্তর প্রতিনিধিগণ পরামর্শ প্রদান করেন। সভায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক সমস্যার কারণ ও সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন করা হয়।
সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ষাট এর দশকের তদান্তীন টাউন কমিটি আজ কালের বিবর্তনে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়েছে। সার্কেল অফিসারের স্থলে মন্ত্রী পদ মর্যাদার মেয়র নগর পিতার দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা মহানগরীতে গত ৫০-৬০ বছরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি দেশি-বিদেশি সংস্থার মতে এ নগরীতে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৭০ লক্ষ জনসংখ্যা থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। তাছাড়া সিটির আয়তনও প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল কারণে নগরীর ভৌত কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বলেই জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্বল্প মেয়াদী ব্যবস্থা চালু রেখে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকা মহানগরের জন্য আধুনিক ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের এ জলজট বা জলাবদ্ধতার জন্য আমরা সবাই কম-বেশি দায়ী। মহানগরীর অধিবাসী, জন প্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। কোন সমস্যাই চিরস্থায়ী নয়। ঢাকা ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশন এ সমস্যা সমাধানের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। অতএব, এ সমস্যা সমাধানের দায়িত্বও প্রকারান্তরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপর বর্তায়। ঢাকা ওয়াসা ২০০৫ সালে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে যে মাস্টার প্ল্যান করেছে তা ২০১৭ সালে অনুপযুক্ত। এখন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে আরও ১৬ টি ইউনিয়ন যুক্ত হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর আয়তন এখন চারগুণ হয়েছে। ওয়াসার মাস্টার প্ল্যান এখন অচল। নতুন করে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার সমন্বয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর আরেকটি বড় সমস্যা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। ঢাকা ওয়াসার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল না থেকে প্রতিটি বাড়ীতে সেপটিক ট্যাংক বসানো উচিৎ। সেপটিক ট্যাংকে প্রাকৃতিক উপায়ে মানব বর্জ্য সংরক্ষিত থাকে যা অত্যন্ত নিরাপদ। কঠিন বর্জ্য ঢাকা মহানগরীর অন্যতম বড় সমস্যা। যেখানে-সেখানে কঠিন বর্জ্য ফেলার বিষয়টি জলাবদ্ধতাকে বাড়িয়ে দেয়। ড্রেন, খাল সব কিছু এ কঠিন বর্জ্য দ্বারা ভরাট হয়ে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। গৃহস্থালীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ধ্বংস না করা গেলে জলাবদ্ধতা ঠেকানো যাবে না। তাই প্রতিটি বাড়ীতে সেপটিক ট্যাংক বসানো উচিৎ। এজন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। বিবি/০২