ডিএমপি নিউজঃ ‘এসো বই পড়ি, পুরস্কার জিতি’ শ্লোগানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন সম্পন্ন করলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, চেতনা, ও জীবনদর্শনকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ এই আয়োজন হাতে নেয় ২০১৯ সালে।
আজ ২২ মার্চ ২০২২ বিকাল ৩:৩০টায় কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) অডিটোরিয়ামে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার); আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, বিপিএম(বার), পিপিএম। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
কুইজ প্রতিযোগিতাটি দুইটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। প্রথমটি ৮ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি ও দ্বিতীয়টি ছিল একাদশ শ্রেণি থেকে তদূর্ধ্ব শ্রেণি পর্যন্ত।
এতে স্কুল ও কলেজের মোট ১০,০২৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কুইজ প্রতিযোগিতায় মোট ১০০টি প্রশ্ন ছিলো। ১০০টি প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিয়েছে ৪৩৯ জন। তাদের মধ্য হতে মোট ২০জনকে (প্রতি গ্রুপ হতে ১০জন) লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি গ্রুপের বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম তিনজনকে পুরস্কার হিসেবে ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। আর বাকি সাতজনকে পুরস্কার হিসেবে ট্যাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিযোগিদের মাঝে সাধারন পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। সেইসাথে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করে যাচ্ছেন তা জানতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের সামনে মিথ্যায় ভরা তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাস নিজের গতিতে চলে। নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জেনে কারা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক ছিল, কারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, এসব বিষয় জেনে তারা তাদের বিচার বুদ্ধি দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে, তাঁর ত্যাগের কথা জানতে হবে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য ভালবাসার কথা জানতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেছেন। যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আজ তারা এখানে উপস্থিত। তোমাদেরকে জানতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে কোন পর্যায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য হাজার বছর ধরে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমানের ক্ষত নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে একজন বঙ্গবন্ধুর জন্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের ক্ষত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিদাতা, ত্রাণকর্তা। তিনি আমাদেরকে স্বল্প সময়ে একটি পতাকা, একটি দেশ, একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, আত্মমর্যাদাশীল জাতির জন্য লড়াই করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ আমরা দারিদ্র্য জয়ের দ্বার প্রান্তে। আজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, এসডিজি অর্জন এমন কোন সামাজিক দিক নেই যেখানে আমরা আলোচিত হচ্ছি না। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ বঙ্গবন্ধু দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন।
আইজিপি বলেন, আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে যত বেশি চর্চা করবে আমাদের পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম তত বেশি সুদৃঢ় হবে। আর যত বেশি পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম সুদৃঢ় হবে দেশ তত এগিয়ে যাবে।
আইজিপি বলেন, পরিবর্তনের জন্য বেশি মানুষের প্রয়োজন হয় না। যে দশ হাজার শিক্ষার্থী কুইজে অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্য থেকে দশ জন বের হয়ে আসলেই দেশ বদলাতে পারবে।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারাগারের রোজনামচা’ কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনের ফলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুকে জানতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারলে তারা বাংলাদেশকে জানতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতি গঠনের জন্য মানুষকে তৈরি করেছেন, ধাপে ধাপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার এ প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন পড়ার অভ্যাস কমে গেছে। পড়তে হবে প্রশান্তির জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ আজ মর্যাদার আসনে রয়েছে। জনগণের সম্মানের জায়গাটা তারা অর্জন করতে পেরেছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর বই পড়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পরীক্ষার্থী হওয়ার জন্য পড়া নয়, পড়া হোক শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য।
পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শেখ মোঃ তাসনিম ফাহিম রহমান এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোসাম্মৎ তানিয়া খাতুন বক্তব্য রাখেন।
বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের উপর অনুষ্ঠিত কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হলেন যাঁরা-
৮ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীঃ
১ম- ক্রমিক নং ১৮৪২ তানভির মাহমুদ আরাফ, ৮ম শ্রেণী , স্কুল- নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়।
২য়- ক্রমিক নং ১৩৪৬ শেখ মোঃ তাসলিম রহমান ফাহিম, ৯ম শ্রেণী, স্কুল- তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
৩য়- ক্রমিক নং ২৭৮৭ অধরা দেবনাথ, ১০ম শ্রেণী, স্কুল- হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
৪র্থ- ক্রমিক নং ২৫২৫ মাহবুব হাসান রাহিম, ৯ম শ্রেণী, স্কুল- নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়।
৫ম- ক্রমিক নং ৮৩৫ মোঃ বাদল, ৫ম শ্রেণী, স্কুল- ড. ওয়াজেদ মিয়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।
৬ষ্ঠ- ক্রমিক নং ১০০৫ মোঃ বারাকত হোসেন, ১০ম শ্রেণী, স্কুল- শহীদ মনু মিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
৭ম- ক্রমিক নং ৫৫৫ মোঃ সাব্বির ইসলাম আপন, ৮ম শ্রেণী, এসএম জিনিয়াস স্কুল এন্ড কলেজ।
৮ম- ক্রমিক নং ১২৫৮ মোঃ নাইমুল ইসলাম , ৯ম শ্রেণী, স্কুল তেজগাঁও আদর্শ স্কুল কলেজ।
৯ম- ক্রমিক নং ১৯২৮ কৌশিক আহমেদ, ৯ম শ্রেণী, স্কুল নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়।
১০ম – ক্রমিক নং ১৯৫৮ আদনান হোসেন, ৯ম শ্রেণী, স্কুল নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়।
একাদশ শ্রেণী থেকে তদূর্ধ্ব শ্রেণীঃ
১ম- ক্রমিক নং ৫৩৭২ তানিয়া, স্নাতক, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
২য়- ক্রমিক নং ৮৬১০ সুমাইয়া আক্তার, মাস্টার্স, বালিয়াহাট ডিগ্রি কলেজ।
৩য়- ক্রমিক নং ৭২৯৯ প্রমা বণিক, দ্বাদশ, হলিক্রস কলেজ।
৪র্থ-ক্রমিক নং ৯৭০৮ মাহমুদুল হক, ডিপ্লোমা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
৫ম- ক্রমিক নং ৮৬১৪ গোলেনুর আক্তার তমা, অনার্স, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী।
৬ষ্ঠ- ক্রমিক নং ৭২৮৩ কাজী আতিভা তসলিম, দ্বাদশ শ্রেণী, হলিক্রস কলেজ।
৭ম- ক্রমিক নং ৬৭৮৬ তানজিলা আক্তার তন্নি, ডিপ্লোমা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
৮ম- ক্রমিক নং ৮৫৭৭ সাবরিনা মুনছুর, অনার্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
৯ম- ক্রমিক নং ৯৭০৬ মোঃ মোরশেদ খান, ডিপ্লোমা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
১০ম- ক্রমিক নং ৫৯৬৯ প্রিয়সী মন্ডল, দ্বাদশ শ্রেণী, রামপুরা ইকরামুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ।