সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস স্মরণে “বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন” আয়োজনে রাজধানীর রমনায় পুলিশ কনভেনশন হলে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
আজ ২৬ আগস্ট, ২০২১ (বৃহস্পতিবার) এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। অনু্ষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) , অতিরিক্ত আইজিপি স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ ও সভাপতি , বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন।
সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া, জাতির পিতার জীবনের ওপর নির্মিত লাইট আর্টস প্রদর্শন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কথা মনে আসলে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীর কথা বলি। তিনি একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন। মাত্র পঞ্চান্ন বছর জীবিত ছিলেন তিনি। এ পঞ্চান্ন বছর বয়সে তিনি ৩০৫৩ দিন কারাগারে ছিলেন। তিনি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করে গেছেন। এই ৫৫ বছরে তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে গিয়েছিলেন তিনি”।
তিনি বলেন, ছয় দফা নিয়ে সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়িয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যে জেলাতেই যেতেন মিটিং শেষ করে নামলেই ওয়ারেন্ট এসে হাজির হত। ডিফেন্স পাকিস্তান রুলে তাকে আটক করা হত।
তিনি আরো বলেন, “আমরা যখন বলি, বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অনেকে এর বিরোধিতা করেন। আজকে আমাদের কাছে যে রেকর্ডপত্র রয়েছে, আমাদের প্রিজনে যে রেকর্ডপত্র রয়েছে, এসবিতে যে রেকর্ডপত্র রয়েছে তাতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে তিনি জেলে বসে নির্দেশনা দিতেন, চিঠি লিখতেন, কিভাবে ভাষা আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর ৫৪, ৬৬ ও ৬৯ এর আন্দোলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে জনগণের কাছ থেকে স্বাধীনতার ম্যান্ডেট আদায় করেছিলেন”।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সুযোগ পেয়েছিলেন। তখন সবখানে ছিল নাই, নাই। বঙ্গবন্ধু তাঁর দক্ষতা দিয়ে, সৎ সাহস দিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন। এজন্যই ঘাতকরা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেনি। ঘাতকরা জানতো বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে সেই ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের আশঙ্কা যথার্থই হয়েছিল।
তিনি বলেন, তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন একে একে তিনি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে বদলে দেবেন। আজ তিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। আজ আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের পুলিশ গড়তে চেয়েছিলেন। আজ আমাদের পুলিশ সেই জায়গাটিতে গিয়েছে। তারা আজ যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন থেকে আরম্ভ করে সবকিছু তারা সমানতালে করে যাচ্ছে বলে আমরা দেশকে শান্তির দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন ১৯৭১ সালে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশ ছিল ঘাতক কবলিত। বন্দুকের নলেন নিচে,বেয়ানটের নিচে বাংলাদেশকে চাপিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের যে প্রতিবাদের ভাষা,শোকের ভাষা, সেটি আমরা প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু আমরা সবাই জানি, এক সময় প্রতিবাদের যে বিষ্ফোরণ ঘটেছে। শোক থেকে শক্তির যে জাগরণ ঘটেছে সে জাগরণ আজকে বাংলাদেশকে একটি সমুন্নত আসনে অসীন করেছে। এবং আগামী দিনের যে স্বপ্নযাত্রা, সেই স্বপ্নযাত্রায় আমরা সবাই আজকে শামিল।
তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধু চিরন্তন বঙ্গবন্ধুতে রূপান্তরিত হয়েছে। মুজিব চিরন্তন আলোকে শিখা। এই আলোকে শিখায় উদ্ভাসিত হয়ে আমরা যেন রাস্তার দুটি পাশে দাড়িয়ে আছি। দুই সপ্তাহ নয় , দুই বছরও নয় ,শতবছর নয়, আগামী দিনের হাজার বছর পেরিয়েও বাঙালী যত দিন বেচেঁ থাকবে, এ বাংলাদেশ যতদিন থাকবে আমরা এভাবেই আমরা আমাদের চিরন্তন শোক আমাদের ভালবাসার প্রকাশ করব। তাই বঙ্গবন্ধু প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা কখনও শেষ হবে না । মুজিব চিরন্তন এক আলোকশিখা সেই আলোক শিখা বলেই আজ শোক থেকে শক্তি শোক থেকে জাগরণ।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরের সকল জল দিয়েও যদি আমরা আমাদের হাত ধৌত করি, তাহলেও এ রক্ত যাবে না, এ শোক যাবেনা।
সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালবাসতেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। তিনি বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে সুখময় মুহূর্ত হল বাঙালীর স্বাধীনতা । মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।
তিনি বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ রাখা হয়েছে, যা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এ কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
আইজিপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৫ আগস্ট অবশ্যই প্রতিটি স্বাধীন আত্মমর্যাদাবান বাঙালীর জন্য চরম লজ্জা ও বেদনার। চার হাজার বছরে বাঙালির নিজেদের স্বাধীন করার কোনো ইতিহাস নেই। চার হাজার বছর ধরে বাঙালি ছিল নির্যাতিত, বঞ্চিত। ক্ষুধা, জরা-দারিদ্র্য ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী। বঙ্গবন্ধু যখন বলেন, ‘আজ আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি’ আসলে তিনি আমাদের চার হাজার বছরের দুঃখের কথা বলেন।
তিনি বলেন, এদেশের প্রতিটি খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি, কাদা মাটির গন্ধ মাখা মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ । এর সঙ্গে আরেকটা কথা বলেছিলেন ‘মুক্তির সংগ্রাম’। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে।
আইজিপি বলেন, আমরা সৌভাগ্যবান। তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ পেয়েছেন এবং দেশের সেবা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, বাঙালীর স্বাধীনতা যেমন বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অজর্ন যার মহান স্থপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঠিক তেমনি বাঙালী জাতির জন্য সবচেয়ে লজ্জা ও কলঙ্কের দিন হল ১৫ আগস্ট। সেদিন কুলাঙ্গারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, এসোসিয়েশনের সভ্যগণ উপস্থিত ছিলেন এবং সকল পুলিশ ইউনিট থেকে অন্যান্য কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।