জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের বিতর্ক পর্বে ৭২-তম সাধারন অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও বাংলায় বক্তব্য দিবেন ।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবারের মত এবারও বাংলায় বক্তব্য দিবেন তিনি। বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ তুলে ধরে আশু সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন। এর পেক্ষিতে তিনি অবিলম্বে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিও জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২ তম অধিবেশন জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক (General Debate) পর্ব আগামী ১৯-২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হচ্ছেঃ “Focusing on People: striving for peace and a decent life for all on a sustainable planet”।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
মন্ত্রী বলেন, একাধিক কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
এবারের সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে মিয়ানমার হতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।
গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশ সীমান্তে ৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যেই প্রায় চার লক্ষ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
এসকল আশ্রয় প্রার্থীর বেশিরভাগই মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক। উল্লেখ্য, এর আগে প্রায় চার লক্ষ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয় যাদের বেশিরভাগই কক্সবাজারে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে। ফলে লক্ষ লক্ষ অসহায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি ।
আর এ সংকটাপন্ন মুহুর্তে জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারন সমূহ তুলে ধরে তা সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে পেশ করা হবে। একইসাথে রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক চলমান জাতিগত নির্মূল অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সকল রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা আমরা চলমান রাখব।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নির্বাচিত হওয়ার পর এটি প্রথম General Assembly. জনাব গুতেরেস শান্তি, টেকসই উন্নয়ন এবং জাতিসংঘের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা সংস্কার এ তিনটি বিষয়কে তাঁর কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এবারের সম্মেলনে শান্তিরক্ষা মিশনের সংস্কার নিয়ে বেশ কিছু বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এ সকল বৈঠকে অংশগ্রহনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তার অগ্রাধিকারভুক্ত বিষয়াবলী তুলে ধরার পাশাপাশি এ সকল বিষয়ের প্রাধান্য নিশ্চিত করার সুযোগ পাবে।
টেকসই উন্নয়নে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এবারের জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনে নারীর সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং নারী-পুরুষের সম অধিকার নিশ্চিতকরণের বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ নারীর সার্বিক উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরার সুযোগ পাবে।