আজ মঙ্গলবার, ১২ ভাদ্র জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর সংগ্রাম ছিল আজীবন। সোচ্চার ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার আর কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে।
১৩৮৩ বাংলা সনের আজকের এই দিনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনাবসান হয়। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই’-কবির এ ইচ্ছা স্মরণে রেখে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
কাজী নজরুলের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তাঁর ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। পিতার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন। নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ-দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।
কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিকজগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তাঁর কবিতা, গান আর উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনা করেছেন নজরুলকে। বলেছেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’ আর কবি ধূমকেতুর মতো প্রলয় নাচনের কাঁপন জাগিয়ে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজশক্তিকে। লেখনীর মধ্য দিয়ে সব রক্তচক্ষুুকে ভ্রূকুটি হেনে কবি মানুষের অমিত শক্তি ও সাহসের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে গেছেন। আগুন ঝরেছে কবির কলম দিয়ে। রাজ-রোষ বারবার তাকে ভস্মীভূত করতে চাইলেও নজরুল নিত্যনতুন শক্তিতে জেগে উঠেছেন বারবার। মানুষের দুঃখ-বেদনা দূর করতে ও সংগ্রামী চেতনার মশাল জ্বালিয়ে রাখতে নজরুল সার্বক্ষণিক প্রেরণা হয়ে আছেন বাঙালির চিত্তে। তাঁর কবিতা ‘চ্ল চল্ চ্ল’ বাংলাদেশের রণসংগীত।
বাংলায় সর্বোচ্চসংখ্যক তিন সহস্রাধিক গান লিখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। নিজস্ব ধারার সংগীত রচনা করেছেন তিনি। প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত কবি মানুষের সংকীর্ণতা, দীনতা, মূঢ়তা, নীচতাকে ঘৃণা করতেন মনেপ্রাণে। মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর বন্ধন নিয়ে তিনি লিখে গেছেন অসংখ্য কালজয়ী রচনা।
স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।