রাখী বন্ধন (Raksha Bandhan) ভারতের একটি জনপ্রিয় উৎসব। এই উৎসব হলো ভাই ও বোনের উৎসব। রাখী বন্ধনের দিন দাদা বা ভাইয়ের হাতে দিদি বা বোনেরা রাখী পরিয়ে দেয়। রাখী বন্ধন উৎসব হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম ও শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে পালন করা হয়।
ভারতবর্ষে এই উৎসব শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন পালন করা হয়। এজন্য অনেক সময় রাখী বন্ধন উৎসবকে রাখী পূর্ণিমাও বলা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১১ অগাস্ট ২০২২) পালিত হচ্ছে রাখী পূর্ণিমা।
জানেন ঠিক কবে থেকে এই প্রথার জন্ম? কেন রাখী পূর্ণিমা পালন করা হয়, সেই বিষয়েই আজ কথা বলব আমরা। পুরাণে এই বিষয়ে একাধিক গল্প পাওয়া যায়। ইতিহাসেও রাখী বন্ধনের উল্লেখ আছে অনেকবার।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন (Raksha Bandhan) উৎসব পালন করেছিলেন। তিনি কলকাতা, ঢাকা ও সিলেট থেকে হাজার হাজার হিন্দু- মুসলিম ভাই ও বোনকে আহ্বান করেছিলেন একতার প্রতীক হিসাবে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য। উনিশ শতকে আমাদের বাংলায় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে উঠেছিল, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে অপরিমিত ভয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ করা হয়। এই আইন কার্যকরী হয় ১৬ ই অক্টোবর, ১৯০৫। তাই ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে হিন্দু ও মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা আনার জন্য রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল।
১৫৩৫ সালে গুজরাটের সুলতান বাদশা চিতোর আক্রমণ করলে চিতোরের রানী কর্ণবতী হুমায়ুনের সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং তাঁর কাছে একটি রাখী পাঠান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন চিতোর রক্ষা করতে পারেননি কারণ তিনি চিতোর পৌঁছানোর আগেই বাহাদুর শাহ চিতোর জয় করে নিয়েছিলেন। বিধবা রানী কর্ণবতী নিজেকে রক্ষা করতে না পেরে এবং বাহাদুর শাহ এর হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৩০০০ স্ত্রীকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জহর ব্রত পালন করেন। পরে হুমায়ুন চিতোর জয় করে কর্ণবতীর ছেলে বিক্রম সিংহকে রাজা ঘোষণা করেন।
৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দার ও পুরুর যুদ্ধের পরেও রাখী বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায়। স্বামীর প্রাণ সংশয় হতে পারে, এই আশঙ্কা করে আলেকজান্দারের স্ত্রী পুরুর কাছে যান এবং তাঁর হাতে রাখী বেঁধে দেন। তার পরিবর্তে পুরু আলেকজান্দারের কোনও ক্ষতি করবেন না বলে কথা দেন।
পুরাণ মতে, যমের অমরত্বের প্রার্থনা করে তাঁর বোন যমুনা তাঁর হাতে একটি রাখী পরিয়ে দেন। এরপরই যমরাজ কথা দেন যে ভাইয়ের হাতে তাঁর বোন রাখী পরিয়ে দেবেন, তাকে তিনি স্বয়ং রক্ষা করবেন।
আবার অনেকে বলে থাকেন শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিনে হতদরিদ্র নারীর বেশে বালির কাছে আশ্রয় চান লক্ষ্মী। বালি নিজের প্রাসাদের দরজা খুলে দেন তাঁর জন্য। খুশি হয়ে লক্ষ্মী, কাপড়ের টুকরো বেঁধে দেন বালির হাতে। কথিত আছে গণেশের দুই পুত্র, শুভ ও লাভ বায়না ধরেছিল নিজেদের বোনের হাতে তাঁরা রাখী পরতে চায়। শেষে গণেশের দুই স্ত্রী, ঋদ্ধি ও সিদ্ধির অন্তর থেকে নির্গত অগ্নি সৃষ্টি করে সন্তোষীকে। তার হাত থেকে রাখী বাঁধে গণেশ পুত্ররা।
বর্তমান সময়ে আমরা সবাই রাখী বন্ধন উৎসবে মেতে উঠি। কিন্তু তা সত্ত্বেও দামী ও রংচঙে রাখীর নিচে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রাখী বন্ধন এর সেই পুরোনো গৌরব। তথ্য সূত্র: উত্তরবঙ্গ সংবাদ।